দুই বছর করোনা তাণ্ডবের পর দেশের অর্থনীতি পুরনো রুপে ফিরে যাওয়ায় চলতি বছরের মার্চে ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মহামারির পর অর্থনীতি খাত ঘুরে দাঁড়ানোয় পর্যটন সেবায় ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাসে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন ২৫১৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা গত এক মাসের তুলনায় ১৯.১৫ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় ৪০.৯৪ শতাংশ বেশি।
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রধান আহসান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল পেমেন্টে লেনদেন বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।
ব্যাংকের এ কর্মকর্তা বলেন, মহামারি চলাকালে অনেক দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আন্তর্জাতিকভাবে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।
আহসান উল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর প্লাস্টিক এ কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইস্টার্ন ব্যাংকের এখন প্রায় দুই লাখ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী রয়েছে। সেসব কার্ডের বিপরীতে বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০০ কোটি টাকায়।
ইস্টার্ন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, গ্রাহকদের বর্তমানে চার ধরনের কার্ড প্রদান করছে ব্যাংক। যেগুলো হল- ভিসা, মাস্টারকার্ড, ইউনিয়নপে এবং ডিনার্স ক্লাব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার ২০৭-এ দাঁড়িয়েছে। গত এক মাস আগেও যে সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬৪।
চৌধুরীর সাথে একমত পোষণ করে মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির পর ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় কার্ডের লেনদেন বেড়েছে।
মোহাম্মদ কামাল বলেন, মার্চ মাসে কার্ডে লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ ছিল মুসলিম ধর্মালম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর।
কামাল বলেন, মহামারি পরবর্তী সময়ে মানুষ এখন দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করছে। এছাড়াও উৎসবের কারণে এপ্রিল মাসে কার্ডের লেনদেনও বেড়েছে।
নগদবিহীন লেনদেনে জনগণকে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার। তিনি বলেন, আসন্ন বাজেটে এ সংক্রান্ত কিছু একটা প্রতিফলন ঘটতে পারে।
সাউথইস্ট ব্যাংকের কার্ড বিভাগের একজন নির্বাহী বলেন, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বর্তমানে যে পরিমাণে ভ্রমণ, পর্যটন এবং প্রসাধনী সামগ্রীতে ব্যয় হচ্ছে, মহামারীকালীন সময়ে ঠিক এর উল্টো চিত্র দেখা দিয়েছিল।
স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে ভোক্তা পর্যায়ে ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হারের ওপরে ৫ শতাংশের বেশি ধার্য করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ইতোমধ্যে ক্রেডিট কার্ড লোনের উপর ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। যেখানে অন্যান্য ঋণের ওপর সুদের হার ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ।
দেশে বর্তমানে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসা পরিচালনা করছে ৩৫ ব্যাংক। এছাড়াও ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ক্রেডিট কার্ড ঋণের সুদের হার ২০ শতাংশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।