প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্ট নেই কাজী ফার্মের ডিম-মুরগির

রোকন উদ্দীন
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:২০:৩৬ | আপডেট: ১ year আগে
ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্ট নেই কাজী ফার্মের ডিম-মুরগির

ফার্মের মুরগির ও ডিম এন্টিবায়টিক মুক্ত বলে দাবি করলেও এগুলোর কোনো ল্যাব টেস্টের প্রমাণ দিতে পারেনি এখাতের বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্ম। এছাড়া হঠাৎ আগস্ট মাসে তাদের ডিম ও মুরগির দাম কেন অস্বাভাবিক বেড়েছে তারও উত্তর দিতে আরও সময় চেয়েছে ফার্মটি।

সোমবার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনে এক শুনানিতে অংশ নিয়ে তারা এই সময় চায়।

এসব তারা আগস্ট মাসে কেন হঠাৎ মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা ও ডিমের দাম প্রতিটিতে ২ টাকা ৫ পয়সা উপরে দাম বাড়িয়েছিল তার উত্তর দিতে আরও সময় চায়। উৎপাদন খরচ ও নিলামের তথ্য পর্যালোচনা করে তথ্যসহ উত্তর দিবে বলে জানিয়েছে তারা। তবে তারা বলছে, দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বাজার চাহিদা প্রধান কারণ।

আগস্ট মাসে হঠাৎ ফার্মের মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে বাজার অভিযান চালিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১২টি মামলা করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় কাজী ফার্মের বিরুদ্ধে। সোমবার রাজধানীর কমিশনের কার্যালয়ে মামলা দুটির শুনানিতে কাজী ফার্মের পক্ষে অংশ নেয় পরিচালক জাহীন হাসান ও দুই আইনজীবী।

এসময় কমিশনের চ্যায়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম কাজী ফার্মের কাছে জানতে চান, হঠাৎ করে চাহিদাও বেশি বেড়ে যায়নি, আবার উৎপাদনও হঠাৎ করে কমে যায়নি। যেখানে প্রতিটি ডিমে আগে মাত্র ১৫-২০ পয়সা লাভ করা হতো সেখানে গত আগস্ট মাসের মঝামাঝিতে প্রতিটি ডিমে ২ টাকা ৭০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া মুরগিতে কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এমন কি হয়েছিল ওই সময়।

জবাবে কাজী ফার্মের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডিম ও মুরগির বাজারে তাদের শেয়ার মাত্র ৩-৪ শতাংশ। এতো কম উৎপাদন দিয়ে বাজারের দামে প্রভাব সৃষ্টি করা যায়না। এছাড়া ডিম ও মুরগি মজুদ করেও রাখা যায়না। ডিম ও মুরগি তারা দৈনিক ভিত্তিতে নিলামে বিক্রি করে। নিলামে বাজার মূল্যকেই ভিত্তি মূল্য ধরে তারা নিলাম শুরু করে। তাই তারা মূল্য দেয়না না মূল্য গ্রহণ করে। সাম্প্রতিক সময়ের খাদ্যের উপকরণের আমদানি খচর বৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যের দাম বেড়েছে। এতে ডিম ও মুরগির বাজার মূল্যও বেড়েছে। তবে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ তারা দেখাতে পারেনি। এছাড়া গত মাসে তাদের নিলাম মূল্য কত ছিল তার তথ্যও তাদের কাছে ছিলনা।

কমিশনের চেয়ারম্যান জানতে চান, তাদের ডিমের দাম বাজারে অন্যদের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকে, এটা কেন। তাদের ডিম বা মুরগিতে বাড়তি কোন ভ্যালুএডিশন আছে কিনা?

ডিমের প্যাকেজিং ছাড়া বাড়তি কোন ভ্যালু এডিশনও নেই তাদের। আর মুরগি অধিকাংশই সবার মতো খোলা বাজারে বিক্রি হয়। তবে তারা দাবি করে তারা যে ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে তা সম্পূর্ণ হাইজেনিক ও জীবানুমুক্ত পরিবেশে করা হয়। এছাড়া তারা মুরগিকে এন্টিবায়টিক দেয়না। ফলে তাদের ডিম অন্যসবার চেয়ে আলদা, এন্টিবায়টিক মুক্ত ও উন্নতমানের।

এসময় চেয়ারম্যান জানতে চান এগুলো যে এন্টিবায়টিক মুক্ত তার কোন ল্যাব পরিক্ষা আছে কিনা। এগুলোর মান কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়? এছাড়া তাদের এসব মুরগি ও ডিমের মান সরকারি কোন প্রতিষ্ঠান দ্বারা তদারকি হয় কিনা।
এক্ষেত্রে তাদের কোন ল্যাব পরিক্ষা নেই বলে জানায়। এছাড়া প্রণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ও এবিষয়ে কোন তদারকি করে না। তবে তারা নিজেরাই এগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানায়।

শুনানির শুরুতে কাজী ফার্মের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পড়ে শোনানো হয়। তাতে বলা হয়, স্বাভাবিক সময়ে আপনাদের নির্ধারিত ডিমের ডিলার বা বিডারগণ ১৫-২০ পয়সা লাভে ডিম বিক্রি করলেও গত ৯-১৩ তারিখ প্রতিটি ডিমে ২ টাকা ৭০ পয়সা লাভে বিক্রি করেছে। এবিষয়ে ৩০ আগস্ট একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাতে বলা হয়েছে কাজী ফার্মের ডিলার আশুলিয়ার ফসাল এন্টার প্রাইজ বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাকে হাজির করার নির্দেশ দিলেও তাকে হাজীর না করে কাজী ফার্মের পক্ষ থেকে বলা হয় সে কোন অন্যায় করেনি, এবং নিয়ম মেনে নিলামে অংশ নিয়েছে। কাবে ফয়সার এন্টার প্রাইসের মালিক পরে নিজে উপস্থি হয়ে অতিরিক্ত দামে ডিম বিক্রির জন্য ক্ষমা চায় এবং অভিষ্যতে এমন হবে না বলে জানায়। এছাড়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে হঠাৎ ডিমের দাম প্রতিটিতে আড়াই টাকা ও মুরগি কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর জবাবে কাজী ফার্মের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগের লিখিত জবাব দিতে দুই সপ্তাহের সময় চান। একই সঙ্গে প্রতিবেদনের কপি ও অভিযোগের কপি নিয়ে চান। কমিশন আগামী ৬ অক্টোবর তারিখ শুনানির নতুন তারিখ ধার্য করে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা ও তিন মাসের উৎপাদন, বিক্রয়, বিক্রয় মূল্যসহ ৮ ধরণের তথ্য আগামী শুনানিতে লিখিত আকারে দিতে বলেন।