তাশরিফা তৃষা
দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সময়ে অনেক শিক্ষার্থীরই পোশাক নষ্ট কিংবা ছোট হয়ে যাওয়ায় বানিয়ে নিতে হচ্ছে নতুন করে। এতে সারা দেশের দর্জিদেরই বেড়েছে পোশাক তৈরির ব্যস্ততা; বেশি অর্ডার পাওয়ায় ব্যবসাও ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেইলার্সের মালিকরা।
গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলেছে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর থেকেই নতুন পোশাক তৈরির জন্য অর্ডার দিতে দর্জির দোকানে ভিড় করছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দর্জিরা জানান, প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীর পুরানো ইউনিফর্ম এখন আর পরার উপযোগী নয়, তাই তারা নতুন পোশাক বানানোর অর্ডার নিয়ে আসছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন পোশাক তৈরির চাপ বাড়ায় দর্জিরা তাদের গ্রাহকদের হাতে সময় মতো পোশাক তুলে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
দ্য বিজনেস পোস্ট’র সাথে আলাপকালে, রাজারবাগের ইউনিফর্ম টেইলার্সের মালিক বিএম আজিজুল ইসলাম বলেন, ইউনিফর্মের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এখন প্রায় প্রতিদিন ২০ টিরও বেশি অর্ডার পাচ্ছি, এতে আমরা বেশ খুশি, ব্যবসাও ভালো হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দর্জিরা নিজেদের ইচ্ছে মাফিক মজুরি নিচ্ছেন। একটি পোশাক তৈরির দাম এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন তারা।
কাপড়ের মানের পাশাপাশি সেলাইয়ের ওপর ভিত্তি করে একেক দোকানে একেক দাম নির্ধারিত হয়। চীন ও থাইল্যান্ডের তৈরি কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরির দাম দেশীয় পোশাকের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন দর্জিরা।
নিউ কোয়ালিটি টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিকস রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকার জনপ্রিয় ইউনিফর্ম টেইলার্স। এর মালিক মমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হওয়ায় আমাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। এখন, কাজের চাপ আগের চেয়ে বেশি এবং সময়মতো অর্ডার বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আমি নতুন কর্মচারীও নিয়োগ করেছি।
তিনি বলেন, সাধারণত- শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম সেলাইয়ের প্রধান সময় হলো জানুয়ারি মাস, যখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। তবে এবারই আমার কর্মজীবনে প্রথমবারের মতো বছরের মাঝামাঝি সময়ে এতো বেশি কাজের অর্ডার পাচ্ছি।
মুমিনুল বলেন, ইউনিফর্মের অর্ডার বেশিরভাগই আসছে তৃতীয় থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
তবে নতুন জামা কেনা আর নতুন ইউনিফর্ম বানানো নিয়ে অধিকাংশ অভিভাবকই উদ্বিগ্ন।
সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের বাবা রোমানা হক বলেন, এ সময়ে যেহেতু আমাদের সন্তানরা বড় হয়েছে, তাই তাদের পুরানো ইউনিফর্ম এখন আর গায়ে লাগছে না।
তবে, এবার স্কুল পোশাক বানানোর দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি বলেও দাবি করেন তিনি।
কিছু অভিভাবক সেলাইয়ের অতিরিক্ত মজুরির কারণে অসন্তুষ্ট। তবে তারা খুশি, কারণ তাদের সন্তানরা দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ক্লাসে যাচ্ছে।
দর্জিরা জানান, আর কিছুদিন পরই পোশাক তৈরির এ ব্যবস্ততা থাকবে না এবং তাদের ব্যবসাও সাময়িক কমে যাবে। কারণ, একটি ইউনিফর্ম দীর্ঘ সময় পরা যায় এবং এসব পোশাক সাধারণত ঘন ঘন পরিবর্তন করেনা কেউ। তবে, এখন যে মুনাফা হচ্ছে, তা সামনের দিনগুলোতে সম্ভাব্য ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে বলেও মনে করেন তারা।