মেহেদী হাসান
করোনা মহামারি কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসায় আবারও ঘুরতে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতির চাকা। এমন বাস্তবতায় গত জুলাইয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে কমেছে অতিরিক্ত তারল্য।
জুলাইয়ে অতিরিক্ত তরল্য দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। জুনে উদ্বৃত্ত তহবিলের পরিমাণ ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাইল আর কে হুসাইন বলেন, জুলাইয়ে বড় ধরনের কোনো অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ শুরু হয় না, কিন্তু ওই মাস থেকেই ব্যয় বাড়তে থাকে, যা উদ্বৃত্ত তারল্য কমার কারণ হতে পারে।
ওই মাস থেকেই আমদানির জন্য এলসি খোলা সংখ্যার বেড়েছে, এটিও উদ্বৃত্ত তারল্য কমার কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে আমদানি ব্যয় ৪.৭৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১.৬৩ শতাংশ বেশি।
মেঘনা ব্যাংকের সিইও আরও বলেন, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে মার্কিন ডলারের চাহিদা, যা উদ্বৃত্ত তারল্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
হুসাইন উল্লেখ করেন, আগামী মাসে ঋণের চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। কারণ, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে ঋণ বাড়াতে এরইমধ্যে চাপ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি বলেন, মহামারি করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের শিল্পের প্রসার এবং বড় বিনিয়োগ এখনও শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও একমত হয়ে বলেন, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে উদ্বৃত্ত তহবিল কমে গেছে। সেইসাথে সম্প্রতি কমেছে রেমিট্যান্সও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২৮ শতাংশ কমে ১.৮৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। যা গত অর্থবছরের একই মাসে ছিল ২.৬০ বিলিয়ন ডলার।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ঋণের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু যদি দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসে তবে সামনের দিনগুলোতে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হলে আগামী দিনে ঋণের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করেন যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নেওয়ার কারণে আগামী দিনে উদ্বৃত্ত তহবিল আরও কমবে।
অতিরিক্ত তরল্য কমাতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিল নিলামের মাধ্যমে ১৯ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৯ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে ৭ দিন, ১৪ দিন এবং ৩০ দিনের বিলে ৬টি নিলামের মাধ্যমে এ তহবিল সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।