চাহিাদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি হলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে মসলার দাম বেড়েছে।
বাজার তথ্য বলছে, গত বছরের ঈদুল আজহার তুলনায় চলতি বছর এলাচ ছাড়া জিরা, দারুচিনিসহ সব গরম মসলার দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া আদা-রসুন-পেঁয়াজের দামও বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর করোনার কারণে হোটেল রেস্তোরা বন্ধ থাকায় মসলার চাহিদা কম ছিল। এছাড়া আমদানি ব্যয়ও গেল বছর কম ছিল। এবার ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে। তবে মসলার দাম হঠাৎ করে বাড়েনি বলে দাবি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মসলার দাম গত দুই থেকে তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দাম বৃদ্ধি হয়নি।
দেশের মসলার অন্যতম পাইকারি বাজার রাজধানীর মৌলভীবাজারে সোমাবার ভারতীয় জিরা বিক্রি হয়েছে ৩৯০ টাকা ও আফগানি জিরা বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি। গত বছর এই বাজারে পাইকারিতে জিরা বিক্রি হয়েছিল ২৭০-২৮০ টাকা কেজি, অর্থাৎ দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। এছাড়া দারুচিনি বিক্রি হয়েছে ৩৯০-৪০০ টাকা কেজি, গত বছর একই সময় দারুচিনির দাম ছিল ৩১০-৩৬০ টাকা কেজি। সে হিসেবে দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। লবঙ্গ বিক্রি হয়েছে ১০৬০ টাকা কেজি, যা গত বছর একই সময় ছিল ৯৫০ টাকা কেজি।
গরম মসলার মধ্যে এলাচের দাম কমেছে ২৮ শতাংশ। গত বছর এলাচির কেজি ছিল ২৫০০-২৬০০ টাকা, যা সোমবার বিক্রি হয়েছে ১৩০০-১৯০০ টাকা কেজি।
অন্যান্য মসলার মধ্যে গোল মরিচ (কালো) বিক্রি হয়েছে ৫২০-৫৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ৮৬০-৮৭০ টাকা কেজি। কিসমিস ৩৩৫-৩৪৫ টাকা কেজি, আলু বোখারা বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা কেজি, জয়ফল ৫৮০-৫৯০ ও যত্রিক ২৩৮০-২৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে পাইকারি বাজারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও হেদায়াত ব্রাদার্সের সত্ত্বাধীকারি হাজী এনায়েতুল্লাহ দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, ‘মসলার দাম বেড়েছে রোজার ঈদের আগে। এখন বরং দাম কিছুটা কমেছে। এবারও গরম মসলার বাজার গরম হয়নি। কারণ বাজারে চাহিদার তুলনায় মসলার সরবরাহ অনেক বেশি।’ মৌলিক নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা হওয়ায় মসলার চাহিদা অনেকে কমে গেছে বলে জানান এই আমদানি কারক।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারিতে মসলার দাম বাড়ছে। এতে খুচরা পর্যায়েও মসলার দাম বেড়েছে। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারে জিরার কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে ৪০০-৪৫০ টাকা ছিল। এলাচ ২২০০-২৩০০ টাকা কেজি, দারুচিনি ৫০০ টাকা কেজি, লবঙ্গ ১২০০-১৩০০ টাকা কেজি, গোলমরিচ (সাদা) ১০০০ টাকা কেজি, যত্রিক ২৮০০ টাকা কেজি, পোস্তাদানা ২৫০০ টাকা কেজি ও আলু বোখারা ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
মসরা ব্যবসায়ী আল্লাহর দান স্টোরের সত্ত্বাধীকারি হোস্তাফিজুর রহমান (সিপন) দ্য বিজনের পোস্টকে বলেন, রোজার ঈদের পর গত সপ্তাহে মসলার দাম কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে জিরার দামটাই বেশি বেড়েছে। যে জিরা আমি রোজার ঈদের আগে ৩৩০ টাকা কেজি কিনেছিলাম গত সপ্তাহে তা ৪০০ টাকায় কিনেছি। অন্যান্য মলার দামও ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে কেজিপ্রতি।’
গমর মসলা ছাড়া পেঁয়াজ, রসূন আদার দামও কিছুটা বেড়েছে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে। গত এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ৫৫ টাকা কেজি। আমদানির পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ৫৫-৬০ টাকা কেজি। এছাড়া খুচরা বাজারে গত সপ্তাহে আমদানির আদা বিক্রি হয়েছিল ৬০-১০০ টাকা কেজি। সোমবার বিক্রি হয়েছে ৯০-১১০ টাকা কেজি, আমদানির রসূন কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ধনের কেজি ১০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সোমবার। এছাড়া খোলা মরিচের গুড়ার দাম কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে ৫০০ টাকা কেজি, হলুদের গুড়া ৫০ টাকা বেড়ে ২৫০-৩০০ টাকা কেজি।