সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের পাঁচজন প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলেছেন।
গত ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে তারা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এক চিঠিতে তারা অভিযোগ করেছেন, ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যানের দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের কারণে ব্যাংকের আমানত বিপদে পড়েছে। দ্য বিজনেস পোস্ট' এ চিঠির একটি অনুলিপি পেয়েছে।
অভিযোগকারী পরিচালকরা হলেন- ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ কাসেম, আজিম উদ্দিন আহমেদ, দুলুমা আহমেদ, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা রহমান ও জ্যোৎস্না আরা কাসেম।
গত ৩০ জুন ব্যাংকের ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ৯ জন পরিচালকের মধ্যে ৫ জন চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সভা থেকে বের হয়ে যান।
চিঠিতে পরিচালকরা জানান, আলমগীর কবির ১৭ বছর ধরে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যার কারণে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, কর্মচারী এবং শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চেয়ারম্যান কবিরের একচেটিয়া ক্ষমতা নিয়ে অন্যান্য পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডাররা খুব বিরক্ত ছিলেন। কারণ তার দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে আমানতকারীরা তাদের অর্থ নিয়ে ঝুঁকিতে পড়ে।
গত ২৮ জুলাই আলমগীর কবির দ্য বিজনেস পোস্ট'কে জানান, তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো জানেন।
তিনি বলেন: আমি সবকিছু জানি। কিন্তু আমি আমার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না।
পরিচালকরা অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান কবির ব্যাংকের নিয়ম কানুন না মেনেই তার স্বজনদের চলতি ঋণের সুদ মওকুফ করেন।
তারা আরও জানান, ব্যাংকের অন্য সকল পরিচালককে এড়িয়ে কবির ঋণ পাওয়ার অযোগ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও ঋণ দিয়েছেন। এর জন্য তিনি গ্রাহকদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধাও নিয়েছিলেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, কবির তার পরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে একতরফাভাবে ঋণ প্রদান করেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যালেন্স শীটে ৪০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেখানো হয়নি।
এছাড়াও, ব্যাংক অবৈধভাবে কবিরের নিকটাত্মীয়ের মালিকানাধীন লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডের ৫৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেন।
পরিচালকগণ দাবি করেন, কবির কমিশনের বিনিময়ে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে সুদের আয় ২৮১ কোটি টাকা দেখিয়েছে, কিন্তু ঋণদাতার সুদের আয় ছিল ৭৮১.৪৫ কোটি টাকা। এখানে ৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম রয়েছে।
সম্প্রতি, ব্যাংক তার বিভিন্ন শাখায় ১৮৫টি ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) স্থাপন করে এবং আরো ৩০০টি মেশিন আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরিচালকরা দাবি করেন, বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে এ সিআরএম মেশিন কেনা হয় এবং অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে।
পাচার করা অর্থ সিঙ্গাপুরে আলমগীর কবিরের ছেলে রায়ান কবিরের তিনটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো- আর এন্ড এন ট্রেড হোল্ডিংস প্রাইভেট লিমিটেড, এক্স-চেঞ্জ সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এবং আর এন্ড এন মেরিন এন্ড শিপ ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড। রায়ান কবির সাউথইস্ট ব্যাংকের একজন পরিচালকও।
আলমগীর কবির এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। কিন্তু গতবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির কারণে তিনি তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
পরিচালকরা তাদের চিঠিতে জানান, তিনি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড থেকে বীমা সেবা নিতে বাধ্য করেছিলেন।
চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, কবিরের সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় বিপুল সম্পদ রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর অভিজাত এলাকায় অর্ধ ডজন ব্যয়বহুল ফ্ল্যাটের মালিক তিনি।
ব্যাংকের ক্রয় সংক্রান্ত এবং অন্যান্য বিতরণ কার্যক্রমের বিষয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উল্লেখ করেন পাঁচ প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ কাশেম এবং পৃষ্ঠপোষক পরিচালক আজিম উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি এ চিঠি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। গভর্নরের কাছে চিঠি পাঠানো হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বছর মার্চের শেষে সাইথইস্ট ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। যদিও এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে যা মোট বকেয়া ঋণের ৪.৩৭ শতাংশ।