বন্ধের পাঁচ বছর পর ফের উৎপাদনে ফিরছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল।
শনিবার কোম্পানিটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। চলতি মাসেই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে জানান আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আজিমুল ইসলাম।
এদিন চট্টগ্রামে অবস্থিত সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল কারখানাটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা কর্মসংস্থান। ব্যাংকের দুই'শ কোটি টাকা লোনসহ হঠাৎ করে একটি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংক বিপদে পড়ে এবং আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বিপদে পড়েন। আর দুই-তিন হাজার লোক বেকার হয়ে যায়। এখন উনারা (আলিফ গ্রুপ) দায়িত্ব নিয়েছেন, আশা করা যায়- আবার নতুন করে কাজের উদ্যমে কর্মসংস্থান হবে। এক্সপোর্ট হবে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের গ্রোথ অনেক হাই উল্লেখ করে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, এ সেক্টরের ক্যাপাসিটি বাড়ানোটা খুবই দরকার। এখানে ওনাদের উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন যে ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে তা হয় তো ফুলফিল হবে। ব্যাংকও তাদের আটকে যাওয়া অর্থ ফেরত পাবেন। উনারা (আলিফ গ্রুপ) এখন ব্যাংকের আটকে যাওয়া ফান্ড গ্রাজুয়ালি শোধ করবেন। বিনিয়োগকারী যারা বিনিয়োগ করে আটকে গিয়েছিলেন তারাও সুবিধা পাবেন।
আরও পড়ুন- দশ কোম্পানির দখলে মোট লেনদেনের ২৯.০৫ শতাংশ
যারা বিশাল প্রজেক্ট দিয়ে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিপদে ফেললো এবং ব্যাংকের লোন নিয়ে সটকে পড়ল, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর একটা কোম্পানিও বন্ধ হয়নি। তাছাড়া আগে বিএসইসিতে কোনো তদন্ত বিভাগ ছিলো না। আমরা তদন্ত বিভাগ করেছি। এখন ফৌজদারি মামলা দায়ের করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগে এটা ছিলো না।
তিনি আরো বলেন, আগে একদিনে ৬৫টি কোম্পানি ওটিসিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো। এখন কোম্পানিগুলোর অ্যাসেট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেগুলোকে একটা একটা করে ধরছি এবং ভালো ফলাফল পাচ্ছি। খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় দুই- চারটি কোম্পানি ইতিমধ্যে উৎপাদনে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি ৫০-৬০টা কোম্পানি চালু করতে পারি তাহলে ২০-৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এর জন্য নতুন করে জমি কেনা, ফ্যাক্টরি করা এগুলোর কিছু করতে হবে না। শুধু তারা যে কাজগুলো করছেন সেগুলো নতুন করে সার্ভিসিং করে ঠিকঠাক করা, কোথাও কোথাও হয়তো নতুন মেশিন স্থাপন করছেন।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল পুনরুজ্জীবিত করতে কি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে এবং কবে নাগাদ পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আজিমুল ইসলাম বলেন, আমরা ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে আরও বেশি লাগবে। আর আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু করার।
পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগিরই পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ফিরে দেখা-
বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ২০০১ সালে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা মূলধনের কোম্পানি ছিল। এরপর ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বরে ৯ লাখ ৯২ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু ও প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো হয় ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ফের নতুন শেয়ার ছেড়েছিলো কোম্পানিটি। সেসময় ১২০ কোটি টাকার বেশি মূলধন বাড়িয়ে বিএসইসির কাছে আইপিও আবেদন জমা দেয়া হয়।
অর্থাৎ আইপিও আবেদনের আগের দুই মাসে পাঁচ লাখ টাকার কোম্পানিটি হয়ে যায় ১৩০ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি। আইপিওর ৪৫ কোটি টাকা যোগ হওয়ার পর সেটি হয়ে যায় ১৭৫ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি। তালিকাভুক্তির পর তিন বছরে কোম্পানিটি ১১, ১২ এবং ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। এতে কোম্পানির মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন- গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২৯.১৫ শতাংশ
একদিকে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ার বাড়ায় কোম্পানিটি, অন্যদিকে গোপনে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উদ্যোক্তা পরিচালকরা।
২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তিনি বছর পার না হতেই ২০১৭ সালে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা সংস্কারের কথা বলে ২০১৭ সালের ১ মে থেকে উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি।
আলিফ টেক্সটাইল কতৃক সিএন্ডএ অধিগ্রহণ
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আলিফ গ্রুপের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়। আলিফ গ্রুপের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবরে বিএসইসি কিছু শর্ত দিয়ে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণে সম্মতি দেয়।
আলিফ গ্রুপকে যেসব শর্ত দেয়া হয়-
>>> নতুন শেয়ার ইস্যু ও বন্ডের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধিতে আসন্ন নতুন ম্যানেজমেন্টকে প্রযোজ্য সকল সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করতে হবে।
>>> সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিবিধান পরিপালন করে আলিফ গ্রুপকে তাদের প্রস্তাবিত অধিগ্রহণ কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে হবে।
>>> সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে উৎপাদনে ফেরাতে আলিফ গ্রুপ অবিলম্বে কাজ শুরু করবে। এ জন্য গ্যাস লাইনসহ অন্যান্য সকল ইউটিলিটিজের সমস্যা কাটিয়ে তুলবে।
>>> আলিফ গ্রুপকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ব্যাংকের দায় মেটাতে হবে।
>>> আলিফ গ্রুপের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংকে সিকিউরিটিজ আইন মেনে স্থগিত থাকা সব এজিএম সম্পন্ন এবং আর্থিক প্রতিবেদনে দাখিল নিয়মিত করতে হবে।
>>> শেয়ার মানি ডিপোজিটের বা সংগৃহীত অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। যা দিয়ে শুধুমাত্র ব্যাংকের দায় মেটানো ও উৎপাদন চালুর কাজে ব্যবহার করা যাবে।
>>> সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উৎপাদন শুরু করতে আলিফ গ্রুপ সকল উদ্যোগ এবং দায় নেবে।