প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

সুদিন আসছে চামড়া শিল্পে

আরিফুর রহমান তুহিন
১৭ মে ২০২২ ১৯:৩৫:৫৯ | আপডেট: ১ year আগে
সুদিন আসছে চামড়া শিল্পে

পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর এবং ট্যানারি বর্জ্য নিয়ে কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে খোলা মাঠে এ সব বর্জ্য ফেলায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাভার ট্যানারি এস্টেটের ৬৮টি কারখানাকে এখনো নির্দিষ্ট কোন জায়গা দিতে পারেনি। এর মধ্যে আরও কয়েকটি কারখানা তাদের উৎপাদন শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিসিকের ব্যর্থতার কারণে এ শিল্পটি বিকশিত হতে পারছে না। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার পরে চামড়ার বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে রপ্তানি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।

রপ্তানিকারকরা দ্য বিজনেস পেস্ট’কে বলেন, ‘আমাদের প্রধান রপ্তানি হয়- চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং ইতালিতে। কিন্তু বিসিকের কমপ্লায়েন্স ইস্যুর কারণে এসব দেশগুলো ন্যায্যমূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য নিতে চায়। প্রতি বর্গফুট চামড়া রপ্তানি করতে ১ থেকে ১.১ ডলার খরচ হয়। কিন্তু কমপ্লায়েন্স ইস্যুর কারণে এখন ১.৩ থেকে ১.৪ ডলার ব্যয় হয়।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ন্যূনতম ৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করার সামর্থ্য থাকার পরও তা পূরণ করতে পারছি না। চাহিদা অনুযায়ী দেশে কমপ্লায়েন্স কারখানা নেই। ফলে আমরা বিশ্বের ভালো ভালো কোম্পানিগুলিতে রপ্তানি করতে পারছি না।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাতে আয় হয়েছে ১.২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৯৭ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি দাঁড়িয়েছে ৯৪২ বিলিয়ন ডলারে। আর চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় সাড়ে ৮০০ মিলিয়ন ডলার।

কিন্তু, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিলের মধ্যে চামড়া শিল্পের আয় ৩২.৯৭ শতাংশ বেড়ে ১.০১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে বলে জানিয়েছে ইপিবি।

এদিকে, ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আধুনিক চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার ট্যানারি কারখানাগুলিকে রাজধানী-শহরের বাইরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিল। যাতে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্যে আবাসিক এলাকার পরিবেশে ক্ষতি না হয়। সে জন্য হাজারীবাগ থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে সাভারে প্রায় ২০০ একর জমি বরাদ্দ করে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৭৫.৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো। প্রায় ১৫ বছর পরেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিসিক।

ন্যায্যমূল্য না থাকা, চাহিদা কম এবং নেতিবাচক রপ্তানিসহ অন্যান্য বেশ কিছু কারণে দেশীয় বাজারে কাঁচা চামড়ার চাহিদা অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। ফলে ছোট ব্যবসায়ীরাও চামড়া বিক্রি না করে ফেলে দেয়। এ কারণে সরকার ‘কেস-টু-কেস’ ভিত্তিতে কাঁচা চামড়া এবং ভেজা-নীল চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই গত জুলাই থেকে কাঁচা চামড়ার বাজার কিছুটা বেড়েছে।

বিটিএ সাধারণ সম্পাদক মো. সাকাওয়াত উল্লাহ দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, এখন সাভার ট্যানারি এস্টেটে ১৩৪টি কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিজস্ব খরচে ইটিপি স্থাপন করেছে। এরপর থেকে অনেক ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে কেনা শুরু করেছে। এতে দেশের রপ্তানি বাড়ছে। তবে আগামী ঈদুল আজহায় কাঁচা চামড়া রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।