এ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইক্স ১৩১ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১১ বাড়ে । পাশাপাশি সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসেই দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারা বজায় ছিল।
এ সপ্তাহের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ডিএসই'র প্রধান সূচকে যোগ হয়েছে ৮২ দশমিক ২০ পয়েন্ট। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬৪৫১ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি পুরো সপ্তাহে বাজারে লেনদেনেও ইতিবাচক ধারা বজায় ছিলো।
আজ ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবস থেকে আজ ১৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৭৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকার।
এর আগে ৯ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত টানা আট কার্যদিবস ডিএসই,র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স হারায় ৫৫৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট। এরপর ২৩ মে ডিএসই সূচক ১১৮ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বাড়লেও পরের দুই দিন সূচক কমে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে গত ২৬ মে থেকে শেয়ার দর কমার সর্বোচ্চ সীমা আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইসের ২ শতাংশে বেঁধে দেয়া হয়। তবে শেয়ার দর বাড়ার সীমা ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়। এর আগে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর কমার সর্বোচ্চ সীমা চলতি বছরের ৯ মার্চ ২ শতাংশ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপরেও লেনদেন ও সূচকের অবনতিতে যা পরিবর্তন করে ২০ এপ্রিল ৫ শতাংশ করা হয়।
২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, শ্রীলংকার অর্থনৈতিক বিপর্যয়, দেশের বাজারে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা দেশের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অব্যাহত দর পতনের প্রেক্ষিতে বাজারের পতন রোধে অর্থমন্ত্রনালয় এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড কমিশন (বিএসইসি) বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়।
অর্থমন্ত্রীর বৈঠক
২২ মে বাজারের টানা দরপতন প্রতিরোধে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে আইসিবির মাধ্যমে ব্যাংকের বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য আইসিবিকে দেয়া ১৫৩ কোটি টাকার যে তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেটির মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী। তহবিলের আকার বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যানের আশ্বাস
গত ২৬ মে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) সেলিব্রেটি হলে আয়োজিত এক ত্রিপক্ষীয় সংলাপে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানান আগামি সপ্তাহে পুঁজিবাজারে ভালো কিছু হবে। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাই আমাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
অর্থমন্ত্রীর বৈঠক, সার্কিট ব্রেকারে পরিবর্তন এবং বিএসইসির চেয়ারম্যানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন- ডলারের একক রেট প্রত্যাহার
এ ব্যাপারে মডার্ন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা-নূর- ই নাহরীন দ্য বিজনেজ পোস্টকে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, শ্রীলংকার অর্থনৈতিক বিপর্যয় সহ সার্কিট ব্রেকার নিয়ে একটি মহল গুজব ছড়িয়ে বাজারে পতন ঘটায়। কিন্তু সরকারের উচ্চমহল এবং বিএসইসির চেয়ারম্যানের তৎপরতার ফলে বাজার এই সপ্তাহে ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে।
একই কথা বলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী । তিনি বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানামুখী পদক্ষেপ এবং পুঁজিবাজারের প্রতি অর্থমন্ত্রনালয়ের ইতিবাচক মনোভাব বিনিয়োগকারীদের হতাশা কাটাতে সহায়তা করেছে। যার ইতিবাচক ফলাফল এ সপ্তাহের বাজারে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন- সূচকের উত্থানে সপ্তাহ শেষ