প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেতন কম পেয়েছেন ৬৭ শতাংশ প্রবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ আগস্ট ২০২১ ১৯:২৯:৩৬ | আপডেট: ৪ years আগে
১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেতন কম পেয়েছেন ৬৭ শতাংশ প্রবাসী

সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে; প্রায় ৬৭ শতাংশ বিদেশ ফেরত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী মাথাপিছু আয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা হারিয়েছেন।

'মজুরি চুরির পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা: উপসাগরীয় দেশ থেকে করোনাকালে প্রবাসীদের প্রত্যাবর্তন' শীর্ষক গবেষণার ভিত্তিতে বুধবার বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেশন (বিসিএসএম) এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল প্রোগ্রামে এ তথ্য জানানো হয়।

গবেষণাটির তথ্য তুলে ধরেন বিসিএসএমের চেয়ারম্যান ও রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার।

এদের মধ্যে পুরুষ কর্মীরা গড়ে ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ও নারী কর্মীরা গড়ে ৯৭ হাজার টাকা করে বেতন হারিয়েছেন। এর মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন ২ হাজার ১২৪ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬০ লাখ ১৪৩ টাকা। তবে তাদের মধ্যে যারা ছয় মাসের বেশি বেতন হারান তাদের গড় মাসিক আয় ছিল ২৭ হাজার ৯৭০ টাকা।

গবেষণায় দেখা গেছে, বেতন হারানো কর্মীদের তালিকার শীর্ষ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। গড়ে প্রত্যেকে ২ লাখ ৪২ হাজার ৪১৯ টাকা করে বেতন হারিয়েছেন। এছাড়া কুয়েতে গড়ে একজন কর্মী ২ লাখ ১৩ হাজার ৫২৯ টাকা বেতন পাননি। আর কাতারে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩১৩ টাকা ও সৌদি আরবে এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৫ টাকা বেতন কম পেয়েছেন।

এছাড়া অন্য দেশের মধ্যে ওমান থেকে এক লাখ ৪১ হাজার ৭২৯ টাকা এবং বাহরাইন থেকে এক লাখ ১৫ হাজার ৮১৪ টাকা করে গড়ে এক একজন কর্মী তাদের আয় অপেক্ষা কম পেয়েছেন।

২০১৫ সালের আগে যারা দেশে ফিরে এসেছেন তাদের গড়ে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৭৬৬ টাকা। আর ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীরা প্রত্যেকে গড়ে এক লাখ ৫২ হাজার ৫১২ টাকা বেতন হারিয়েছেন। তবে যারা সাম্প্রতি প্রবাসে গেছেন তারা গড়ে এক লাখ ৫৯ হাজার ২৩৪ টাকা মজুরি হারিয়েছেন।

মহামারি করোনার আগে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। যারা চাকরিতে ছিলেন, তাদের মধ্যে ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মীর বেতন কমেছে। এছাড়া বৈধ চুক্তিতে থাকা পূর্ণকালীন ৭২ শতাংশ কর্মীর মধ্যে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মীর কর্মঘণ্টা কমেছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশ ফেরত ৬৩ শতাংশ কর্মীকে দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ ফিরে এসেছেন কাজ না থাকায়। আর ২৪ দশমিক এক শতাংশ ফিরেছেন ভিসার মেয়াদ না থাকায়। এছাড়া ১১ দশমিক ১ শতাংশ কর্মীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মী ফেরার পূর্বে আটক থাকায় দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

তবে ফেরার আগে ৯২ শতাংশ কর্মী কোথাও কোনো অভিযোগ জানিয়ে আসেননি। এছাড়া ৩৫ শতাংশের অভিযোগে তথ্যের ঘাটতি আছে, ২০ শতাংশ কর্মীদের কাজে ফেরানোর জন্য সঠিক কারণ ছিল না, কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার ভয়ে ১০ শতাংশ ফেরত এসেছেন। এছাড়া ১১ শতাংশ কর্মী নিয়োগ দাতার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ও চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

গবেষণার তথ্যে বলা হয়, ২৫ মার্চ থেকে ৬মে'র মধ্যে দেশের ৪৫টি জেলার বাসিন্দা মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশ থেকে ফিরে আসা ১ হাজার ১৬০ জন প্রবাসী কর্মীর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ পুরুষ ও ১৫ শতাংশ নারী প্রবাসী কর্মী ছিল।

সৌদি আরব থেকে ৪৫ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান থেকে যথাক্রমে ১৫ শতাংশ, কুয়েত থেকে ১১ শতাংশ, কাতার থেকে ১০ শতাংশ এবং চার শতাংশ বাহরাইন থেকে ফেরত এসেছেন।

বিসিএসএমের চেয়ারম্যান ও রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার জানান, তাদের ফেরাতে কোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। ভবিষ্যতের অভিবাসনকে প্রভাবিত করার আশঙ্কায় উপসাগরীয় দেশগুলোর কর্মীদের প্রতি তাদের এ অনৈতিক সিদ্ধান্ত ‘পক্ষপাতমূলক আচরণ’ এর শামিল। দেশগুলো যদি অভিবাসীদের তাদের প্রাপ্য মজুরি ফেরত দিতে চায়, তাহলে তাদের সাহায্য করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ফেরত অভিবাসীদের পাওনা দাবি পূরণ করা ওই সব দেশের সরকারের দায়িত্ব। এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘেরও যুক্ত হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।