ঈদের দিনে সকাল শুরু হয় সেমাইয়ের মিষ্টি স্বাদে। তাই ঈদ ঘনিয়ে আসায় বাজারগুলোতে জমজমাট হয়ে উঠেছে সেমাইয়ের বেচাকেনা। গত বছরের তুলনায় এবার কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা ও প্যাকেটজাত সেমাই। গত ১০ বছরে সেমাইয়ের যে পরিমাণ দাম বেড়েছে তার প্রায় সমপরিমাণ দাম বেড়েছে এ বছরে।
ব্যবসায়ীরা দ্য বিজনেস পোস্ট’ বলছেন, সেমাই তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বেড়েছে। সেই সাথে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মিরপুর ও মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই ধরনের সেমাই পাওয়া যাচ্ছে- লাচ্ছা ও চিকন সেমাই। এগুলো খোলা ও প্যাকেটজাত বিক্রি হচ্ছে।
ঈদকে কেন্দ্র করে একসময় দেশীয় কারখানাগুলোতে নানা ধরনের সেমাই বানানো হতো। কেউ ক্ষতিকর রং মিশিয়ে রঙিন সেমাই তৈরী করতো। সেমাই বানাতে এখন রঙের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না। মানুষ সচেতন হওয়ায় বাজারে রং মেশানো সেমাইয়ের চাহিদা নেই।
এদিকে, চিকন সেমাই সাধারণত সাদা বা লালচে রঙের হয়। লাচ্ছা সেমাইও দুই ধরনের হয়- লালচে ও সাদা। সেমাই তৈরির প্রক্রিয়া অনুযায়ী রঙের পার্থক্য হয়।
এ বছর প্যাকেটজাত সেমাই বেশি চলছে। স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে এবার খোলা সেমাইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। তবে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষরা খোলা সেমাই নিচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বাজারে বনফুল, প্রাণ, স্কয়ার, মেঘনা, বসুন্ধরা, ওয়েল ফুড, পারটেক্স ও সজীব গ্রুপের সেমাই বিক্রি বেশি হচ্ছে।
বাজারে নানা ব্র্যান্ডের সেমাই থাকলেও দাম মোটামুটি একই। ২০০ গ্রাম প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই বেশির ভাগ কোম্পানির দর ৪৫ টাকা যা এক কেজিতে দাম পড়বে ২২৫ টাকা। গত বছর ২০০ গ্রাম প্যাকেটজাত এ সেমাইয়ের দাম ছিল ৩৫ টাকা। অর্থাৎ এক কেজি কিনতে দাম পড়তো ১৭৫ টাকা। সে হিসেবে ২০০ গ্রাম প্যাকেটে দাম বেড়েছে ১০ টাকা বা ২৮ শতাংশ। আর এক কেজি সেমাই কিনতে বাড়তি খরচ লাগবে ৫০ টাকা।
কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেরা লাচ্ছা সেমাই তৈরি করে আউটলেটগুলোতে বিক্রি করছে। এসব সেমাইয়ের কেজিতে দাম রাখছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর বাজারগুলোতে গতকাল খুচরা বিক্রেতারা খোলা লাচ্ছা সেমাইয়ের দাম চাইলেন ১৮০-২০০ টাকা কেজি। যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৯০-১২০ টাকা কেজি। গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন দাম চাইছেন বিক্রেতারা।
পাইকারি বাজারগুলোতেও খোলা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি। চিকন সেমাইয়ের দরও বেড়েছে প্রায় সমহারে।
সেগুনবাগিচা বাজারের মেসার্স মর্জিনা ট্রেডার্সের মালিক মো. নাসির উদ্দীন বলেন, সেমাইয়ের দাম অনেক বেড়েছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের যে দামে দিয়ে যায় তার থেকে নাম মাত্র লাভে বিক্রি করি। বাজারে এখন প্যাকেটজাত সেমাইর চাহিদা বেশি।
মানিকনগর বাজারে মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রেতা বলেন, পাইকরি বাজারেই এবার ১৫০ টাকা কেজি সেমাই বিক্রি হচ্ছে। আমরা ১৭৫-১৮০ টাকায় বিক্রি করছি। এবার সেমাইয়ের দাম অনেক বেশি। কেন বেশি তা উৎপাদকরাই বলতে পারবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশেনের সভাপতি মাধব চন্দ্র ঘোষ দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেছেন, সেমাই তৈরিতে ময়দা, ভোজ্য তেল, ডালডা ও ঘিসহ যা যা ব্যবহার হয় সেগুলোর দাম বেড়েছে। অর্থাৎ কাঁচামালের দাম বাড়লে পণ্যের উৎপাদন খরচও বাড়ে।
তিনি বলেন, খোলা সেমাইয়ের বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারবোনা। কারণ এগুলোর অনেটাই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই। আমাদের সদস্যরা সাধারণত খোলা সেমাই বিক্রি করেননা। বগুড়াসহ অনেক অঞ্চলে ছোট ছোট সেমাইয়ের কারখানা রয়েছে। তারা কিভাবে দাম নির্ধারণ করে আমাদের জানা নেই।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় ময়দার দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশ, সয়াবিন তেল ২৮ শতাংশ ও পাম ওয়েলের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। দেশে বছরে সেমাইয়ের চাহিদা কেমন তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই কোম্পানিগুলোর কাছে।
বেসরকারি হিসেবে, বছরে সেমাইয়ের বাজার ১০০ কোটি টাকার মতো। এর ৯০ শতাংশই বিক্রি হয় ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক বাজারে।