প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

১০ হাজার কোটির রপ্তানি তহবিল চালু করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪৩:৩০ | আপডেট: ২ years আগে
১০ হাজার কোটির রপ্তানি তহবিল চালু করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশি-বিদেশি উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও বর্তমানে চালু রয়েছে ৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ফান্ড। নতুন এ তহবিলটি ব্যবহার করতে পারবেন রপ্তানিকারকরা।

এক্সপোর্ট ফ্যাসিলিটেশন প্রি-ফাইনান্স ফান্ড (ইএফপিএফ) নামের এই তহবিল থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদের বিপরীতে ছয় মাসের জন্য ঋণ নিতে পারবেন ঋণগ্রহীতারা। তবে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে ঋণের মেয়াদ আরও তিন মাস পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

নতুন বছরের প্রথম দিনে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়, খেলাপিরা ইএফপিএফ থেকে ঋণ নিতে পারবে না। এছাড়া কোনো রপ্তানিকারক যদি এই তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার পর রপ্তানি আয় ফেরত দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তারা ইএফপিএফ থেকে নতুন কোনো সুবিধা পাবেন না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।

রোববার দ্য বিজনেস পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “কম রপ্তানি আদেশের সময়ের মধ্যে আমাদের টিকে থাকতে সাহায্য করবে এ তহবিল। আমাদের মিলিয়ন ইউএস ডলার রপ্তানি পেমেন্ট এখনও ক্লিয়ার করা হয়নি এবং সেই কারণেই লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) দায় বাড়ছে। এখন এই তহবিল দিয়ে এলসি পেমেন্ট ক্লিয়ার করতে পারবেন রপ্তানিকারকরা।”

তিনি আরও বলেন,“তহবিলটি যেহেতু স্থানীয় মুদ্রার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, তাই আমাদের এখনও বাজার থেকে মার্কিন ডলার কিনতে হবে এবং বিক্রয় হারের চেয়ে কমপক্ষে 8 টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সরকারকে অবশ্যই সমন্বিত এক্সচেঞ্জ রেট চালু করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা ইডিএফ অব্যাহত রাখতে চাই এবং ইএফপিএফ তহবিল তার বিকল্প হওয়া উচিত নয়।

দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে ইডিএফ সরাসরি সহায়তা করছে বলেও উল্লেখ করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

সংকটের মধ্যে ইএফপিএফ চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও।

বিদ্যমান মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ইএফপিএফ যে ইডিএফের বিকল্প তা আমরা শিখেছি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ইডিএফ কমায় তাহলে ইএফপিএফ- এর আকার বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে একটি সমন্বিত বিনিময় হার নিশ্চিত করতে হবে।”

ইএফপিএফ ইডিএফের বিকল্প নয়

শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, ডলার সংকট এবং ইডিএফ তহবিল থেকে কম ঋণ পুনরুদ্ধার হারের কারণে এই তহবিল থেকে ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত করছেন নীতিনির্ধারকরা। সেই লক্ষ্যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ইডিএফ ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে ৪ শতাংশ, যা গত বছরের ১৩ নভেম্বর কার্যকর হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ইএফপিএফ ইডিএফের বিকল্প নয়।

ইডিএফ বন্ধ করা হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এই নতুন তহবিল সুবিধাটি ইডিএফ-এর প্রতিস্থাপন নয়, রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন একটি সুযোগ৷ স্থানীয় মুদ্রায় নতুন তহবিলের পাশাপাশি ইডিএফ থেকে ঋণ নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, উৎপাদনের জন্য স্থানীয়ভাবে তৈরি কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হয় রপ্তানিকারকদের। এজন্য ইএফপিএফ তৈরি করা হয়েছে।

“রপ্তানিকারকরা তহবিল থেকে টাকায় ঋণ নিতে পারে। প্রয়োজনে তারা এই তহবিল থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণও নিতে পারবে” যোগ করেন তিনি।

১৯৮৯ সালে রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও সম্প্রসারণের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের জন্য গঠিত হয়েছিল ইডিএফ। সেই সময়ে তহবিলের আকার ছিল প্রায় ৩৯ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ইডিএফের আকার ৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

ইডিএফ থেকে নেয়া ঋণ ২৭০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে সেই পরিমাণ ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অংশ হিসাবে গণনা করা যাবে না।

অনেক রপ্তানিকারক ঋণ নিলেও সময়মতো তা পরিশোধ করতে পারেনি, যার ফলে তাদের ঋণ জোরপূর্বক ঋণে রূপান্তর করেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা ঋণের টাকা ফেরত দেন।

কিন্তু এরপর একটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেখানে বলা হয়, ইডিএফ থেকে নেওয়া ঋণকে জোরপূর্বক ঋণে রূপান্তর করা যাবে না।

বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩.৮৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, এক বিলিয়নসহ ইডিএফ এর ৭ বিলিয়ন মোট হিসেব থেকে বাদ দিতে হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫.৮৩ বিলিয়ন ডলার।

ঋণ পেতে পারেন যারা

বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের টাইপ-বি এবং টাইপ-সি শিল্পের সদস্যরা ইএফপিএফ থেকে উৎপাদনের কাঁচামালের মূল্যের সমান বা সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।

তবে বাংলাদেশ ডাইড ইয়ার্ন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিওয়াইইএ) সদস্য কোম্পানিগুলো সুতা সরবরাহের জন্য ১৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ সুবিধা পাবে না।

এছাড়াও ২০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পাবেন না বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পাবেন না বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ পাবেন না।

এসব প্রতিষ্ঠানের সদস্য ব্যতীত অন্য যেকোনো খাতের চূড়ান্ত রপ্তানিকারকরা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত সুবিধা পাবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।