প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

৯৪২ কোটি টাকার অর্ডারে ব্যস্ত প্রিন্টিং প্রেস

২৪ অক্টোবর ২০২১ ১৬:০১:০৭ | আপডেট: ৩ years আগে
৯৪২ কোটি টাকার অর্ডারে ব্যস্ত প্রিন্টিং প্রেস

মোহাম্মদ আইয়ুব আলী

নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক তৈরি করতে চলেছে প্রিন্টিং প্রেসগুলো। আর তাতে করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে গতি ফিরেছে প্রিন্টিং ব্যবসায়।

সূত্র জানায়, ৯৪২ কোটি টাকার অর্ডার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রেসগুলো।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাদানের প্যাকেজে ৩৬ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ছয়টি কাজের আদেশের বিপরীতে ১৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ছাপার কাজ দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক ক্যাটাগরির (গ্রেড ১ ও গ্রেড ২) জন্য ৪৯ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ৯৮টি লটের বিপরীতে ২৪৭টি দরপত্র দিয়েছিল ৭৫টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ২৬টি লটের কাজ পেয়েছে মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠান। বাকি ৭২টি লট রিটেন্ডারের আওতায় আনা হয়েছে। এগুলোর জন্য ৩০২টি দরপত্র দাখিল করে ৪১টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কার্যাদেশ পেয়েছে ২২টি।

প্রাথমিক ক্যাটাগরির জন্য (গ্রেড ৩ থেকে গ্রেড ৫) ১৮২ কোটি টাকার মূল্যের ৯৮টি লটের বিপরীতে ৭১টি প্রতিষ্ঠান ২৭৪টি দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে ৫২টি লটের কাজ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৬টি লট রিটেন্ডারের আওতায় এসেছে। এর জন্য ৭১টি প্রতিষ্ঠান ৩০১টি দরপত্র দাখিল করে। যার মধ্যে ২২টি কার্যাদেশ পেয়েছে।

এথনিক গ্রুপ ক্যাটাগরিতে ৬৪ লাখ টাকার বেশি মূল্যের মাত্র একটি লটের বিপরীতে চারটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে।

মাধ্যমিক স্তরের (গ্রেড ৬ ও ৭ এবং দাখিল ৬ ও ৭) ২৬১ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ২০৮টি লটের বিপরীতে ১০১টি প্রতিষ্ঠান ৪২৬টি দরপত্র দাখিল করেছে। যার মধ্য থেকে মাত্র ২০টি লট কাজের অনুমোদন পেয়েছে। বাকি ১৮৮টি লট রিটেন্ডারের আওতায় আনা হয়েছিল। এজন্য ১২৫টি প্রতিষ্ঠান ৬০৫টি দরপত্র দাখিল করে, যার মধ্য থেকে ৭০টির বেশি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেন্ডার পেয়েছে।

মাধ্যমিক স্তর ক্যাটাগরিতে (গ্রেড ৮ ও ৯ এবং দাখিল ৮ ও ৯) ২৩৪ জন আবেদনকারী ২৬১ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ২৮০টি লটের বিপরীতে ৬৫৯টি দরপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে মাত্র ৩২টি লট ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছে এবং বাকি ১৮৮টি লট রিটেন্ডারের আওতায় আসে। এর জন্য ২০৩টি প্রতিষ্ঠান ৮২১টি দরপত্র দাখিল করে, যার মধ্যে ৮০টির বেশি দরদাতা ১৮৫টি কাজের জন্য আদেশ পেয়েছে। তিনটি লটের বিপরীতে কোনো টেন্ডার দাখিল হয়নি, যা রিটেন্ডারের অধীনে চলে যায়। এই তিনটি লটের বিপরীতে ৫৪টি রিটেন্ডার দাখিল করেছে ২৯টি প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ১ হাজার ৫০০ সদস্য রয়েছে এবং প্রায় চার লাখ মানুষ মুদ্রণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর এ খাতে ৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়।”

সমিতি বলছে, এখন ব্যবসার জন্য উপযুক্ত সময় এবং আসন্ন শিক্ষাবর্ষের জন্য গাইড বইও ছাপা হচ্ছে।

এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, “এনসিটিবির কিছু অসাধু কর্মকর্তা টেন্ডারের সঙ্গে জড়িত। তাদের পছন্দের দরদাতারা হেরে গেলে তারা পুনরায় টেন্ডারের জন্য আহ্বান জানায়।

তারা আরও জানান, ওয়ার্ক পারমিটের বিলম্ব হওয়ার কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ বিপত্তির সম্মুখীন হতে পারে।

দরপত্রের জন্য মোট ৪৮৮টি লট ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে অতিরিক্ত দামের কারণে ৪৩৬টি লট রিটেন্ডারের আওতায় আনা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, প্রতি বছর অক্টোবরের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি পাঠ্যপুস্তকের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছরের কার্যাদেশ দিতে কিছুটা দেরি হয়ে গেছে।

সরকারি ওয়ার্ক অর্ডারের নিয়ম অনুযায়ী, কাজের আদেশ পাওয়ার পর প্রিন্টার মালিকরা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ২৮ দিন সময় পাবেন। চুক্তি অনুসারে, গ্রেড ৩, ৪, ৫, ৮ এবং ৯ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য ৮৪ দিন এবং গ্রেড ১, ২, ৬ এবং ৭ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য ৭০ দিন সময় থাকবে।

একজন প্রেস মালিক বলেন, “প্রতি বছর আমাদের সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু চলতি বছর সরকারি কাজের আদেশ অনুযায়ী সময়সীমা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য এক ছাপাখানার মালিক বলেন, আমার অনুমান অনুযায়ী, জানুয়ারির মধ্যে আমরা পাঠ্যপুস্তক হস্তান্তর করতে পারবো না। সকল কাজ শেষ হতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। 

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, প্রত্যেক বছর এ সময়ের মধ্যে ৫০ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক উপজেলায় পৌঁছে যায়। কিন্তু এই বছর ৪৩৬টি লট পুনরায় টেন্ডার করার কারণে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতি বছর আমাদের হাতে উদ্বৃত্ত সময় ছিল। কিন্তু চলতি বছর আমাদের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তবুও আমরা আশাবাদী যে ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দিতে পারব।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মতে, চলতি বছর সব মিলিয়ে ৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪৬টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের জন্য ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৭৩ হাজার ২১০টি এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪ কোটি ৭১ লাখা ৬৩ হাজার ২৫৬টি বই বিতরণ করা হবে।