দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বরখাস্ত হওয়া ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) মিজানুর রহমান।
ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বুধবার আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন তিনি।
তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বাধ্য হয়ে তিনি ঘুষ দিয়েছেন বলেই উল্লেখ করেন।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি মামলার আত্মপক্ষ শুনানিতে উভয় আসামিই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। সেদিন বিচারকের জিজ্ঞাসায় আসামি মিজান লিখিত বক্তব্য দেবেন বলে জানান। তাই বিচারক শেখ নাজমুল আলম গতকাল এ বিষয়ে দিন ধার্য করেছিলেন।
ডিআইজি মিজানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, ডিআইজি মিজান অস্বীকার করেছিলেন না যে, তিনি ঘুষ দেননি। লিখিত বক্তব্যে অবশ্য তিনি তা স্বীকার করেছেন। তবে বাধ্য হয়েই ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি। মূলত অভিযোগের সত্যতা না থাকার পরও ঘুষ না দিলে তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিবেন- এমন হুমকির কারণেই তিনি ঘুষ দিতে বাধ্য হন। দ-বিধির ১৬৫ (২) অনুযায়ী কেউ ঘুষ দিতে বাধ্য হলে সেটা অপরাধ নয়।
মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৮ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন আদালত। একই বছরের ১৪ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। চার্জশিটভুক্ত ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ডিআইজি মিজানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান করছিলেন। অনুসন্ধান চলাকালে ২০১৯ সালের ৯ জুন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সাংবাদ প্রকাশিত হয় যে, এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ বা উৎকোচ দিয়েছেন ডিআইজি মিজান। দুদক তৎক্ষণিক একটি কমিটি করে তদন্তে প্রাথমিক সত্যতাও পায়। এর পর এ সংক্রান্তে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিও ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামলাটি রজু করা হয়।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি রমনা পার্কে দুই দফায় যথাক্রমে ২৫ লাখ ও ১৫ লাখ টাকা এনামুল বাছিরকে দিয়েছেন ডিআইজি মিজান। এর চাক্ষুস সাক্ষী আসামি মিজানের দেহরক্ষী হৃদয় হাসান ও অর্ডারলি মো. সাদ্দাম হোসেন।
এছাড়া মিজান ও বাছিরের মুঠোফোনের কথোপকথন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাছির তার ছেলেকে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে আনা নেওয়ার জন্য মিজানের কাছে একটি গাড়িও দাবি করেন, যা তিনি দুদকের বিভাগীয় তদন্ত টিমের কাছে স্বীকারও করেছেন।
তদন্তে আরও প্রমাণ হয় যে, মিজান অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে বাছিরের সঙ্গে ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে সংরক্ষণ করেন এবং পরে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। মিজান নিজে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্যই অসৎ উদ্দেশ্যে বাছিরকে ঘুষ দিয়ে প্রভাবিত করেন। আর বাছির সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তার ওপর অর্পিত দায়িত্বপালনকালে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ঘুষ নিয়ে গোপন করেন।