৩০ বছর আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক রফিকুল ইসলাম এ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীকে জেরার জন্য সময় আবেদন করলে বিচরক আগামী ২৪ মে জেরার দিন ঠিক করেন।
এ মামলার এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেছিলেন তোফাজ্জল হোসেন। সে সম্পর্কেই তিনি এদিন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে মামলাটিতে ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো।
২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আসামিপক্ষের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত।
মামলার আসামিরা হলেন নিহতের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদ ওরফে শাহীন, শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও ডা. হাসান আলীর ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা। সাক্ষ্য গ্রহণকালে সব আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে এ চার্জশিট দাখিল করেন।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রমনা এলাকায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মেয়েকে আনতে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী সগিরা মোর্শেদ। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তার স্বামী আবদুস ছালাম চৌধুরী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে রমনা থানায় মামলা করেন।
ওই মামলায় মিন্টু নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালে ৩ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ। আদালতে বিচারও শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের এক পর্যায়ে সাক্ষীরা জানান, মারুফ রেজা নামের এক ব্যক্তির এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। ফলে আদালত পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান মারুফ রেজা। এরপর গত বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি ২৬ জন কর্মকর্তা তদন্ত করেন। সর্বশেষ গত বছরের ১১ জুলাই হাইকোর্ট পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পরই হত্যার আসল রহস্য বের হতে থাকে।
পিবিআই তদন্তে যে রিকশায় সগিরা মোর্শেদ নিহত হয় সেই রিকশাচালক সালামকে খুঁজে বের করেন। রিকশাচালক জানান, সগিরার হত্যাকারীকে তিনি চিনতেন। এই বাক্যই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে পিবিআইকে সহায়তা করে। তখন তদন্ত কর্মকর্তার নজর পড়ে সগিরার স্বামীর পরিবারের দিকে। পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়।
চার্জশিটে খুনের কারণ হিসেবে বলা হয়, সগিরা মোর্শেদের স্বামীর নাম আবদুস ছালাম চৌধুরী। তার বড় ভাইয়ের নাম সামছুল আলম চৌধুরী। মেজ ভাই চিকিৎসক হাসান আলী চৌধুরী। তিনজনই তাদের পরিবার নিয়ে আউটার সার্কুলার রোডে বসবাস করতেন। সগিরা মোর্শেদরা থাকতেন দ্বিতীয় তলায়। চিকিৎসক হাসান তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীনকে নিয়ে থাকতেন ওই বাসার তৃতীয় তলায়। শাহীন তিন তলা থেকে প্রায়ই ময়লা-আবর্জনা ফেলতেন, যা সগিরা মোর্শেদের পেছনের রান্না ঘর ও সামনের বারান্দায় পড়ত। এ নিয়ে সগিরার সঙ্গে শাহীনের প্রায়ই ঝগড়া হতো। ওই তুচ্ছ কারণেই সগিরাকে শায়েস্তা করার জন্য শাহীন তার স্বামী হাসানকে দিয়ে সিদ্ধেশ্বরী এলাকার সন্ত্রাসী মারুফ রেজাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে হত্যা করতে রাজী করান। মোটরসাইকেলে হাসানের শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান যান। যাতে সগিরাকে সহজে দেখিয়ে দিতে পারেন।