প্রচ্ছদ ›› অপরাধ

ছয় বছরে ৯৪ শতাংশ অভিযোগ তদন্তই করেনি দুদক

সোলাইমান সালমান
০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৩৪:৫৩ | আপডেট: ২ years আগে
ছয় বছরে ৯৪ শতাংশ অভিযোগ তদন্তই করেনি দুদক

গত ছয় বছরে দুর্নীতির অভিযোগের ৯৪ শতাংশেরও বেশি তদন্ত করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময়ের মধ্যে অভিযোগের মাত্র ৫.৬৯ শতাংশ তদন্ত করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

দুদকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত দুদকের কাছে মোট ১ লাখ ৭ হাজার ২৫৭ টি অভিযোগ জমা পড়ে। যার বিপরীতে ৬ হাজার ১০৭টি অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে কাজ করেছিল দুদক। বাকি ৯৪.৩১ শতাংশ অভিযোগই তদন্ত করেনি সংস্থাটি।

চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ হাজার ১৯টি অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে মাত্র ৮৪০টি অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ৩ হাজার ৬০ টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে পাঠানো হলেও ১৪ হাজার ১১৬ টি অভিযোগের বিষয়ে কোনও তদন্ত শুরু করেনি সংস্থাটি।

২০২১ সালে ১৪ হাজার ৭৮৯ টি অভিযোগ পেয়েছিলো দুদক। এর মধ্যে সংস্থাটি ৫৩৩ টি অভিযোগ তদন্ত করেছে এবং ২ হাজার ৮৮৯ টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বাকি অভিযোগ নিয়ে আর তদন্ত হয়নি।

২০২০ সালে ১৪ হাজার ৪৮৯ টি অভিযোগ পেয়েছিল কমিশন। এর মধ্যে ৪২২ টি অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এছাড়া ২ হাজার ৪৬৯ টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হলেও বাকিগুলোর বিষয়ে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

২০১৯ সালে ২১ হাজার ৩৭১ টি অভিযোগ পেলেও মাত্র ১ হাজার ৭১০ টি অভিযোগ তদন্ত করেছে দুদক। এছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৩ হাজার ৬২৭টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বাকি অভিযোগ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই।

২০১৮ সালে মোট ১৬ হাজার ৬০৬ টি অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ২৬৫ টির উপর অনুসন্ধান চালিয়েছিলো দুদক ও ১ হাজার ৪০৪ টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছিল। আর বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

২০১৭ সালে দুদক ১৭ হাজার ৯৮৩টি অভিযোগ পেলেও ৯৩৭ টির বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করে। এছাড়া ৩৭৭ টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হলেও বাকিগুলোর বিষয়ে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া অভিযোগের অধিকাংশই যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

কর্মকর্তাদের দাবি, বিপুল সংখ্যক অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না তারা। কারণ বেশিরভাগই দুদকের এখতিয়ারের বাইরে।

৫ হাজার ২৭৭টিরও বেশি তদন্ত আটকে আছে

নির্ধারিত সময়ে বিপুল সংখ্যক অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করতে না পারলেও শুক্রবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করেছে দুদক। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৫ হাজার ২৭৭ টি অনুসন্ধান এবং তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত ছিল। এর মধ্যে ৮৮১ টির সময়সীমা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।

দুদকের নিয়ম অনুযায়ী, তদন্ত শেষ করতে সর্বোচ্চ ৭৫ দিন এবং মামলার তদন্ত শেষ করতে ২৭০ দিন সময় পান একজন কর্মকর্তা।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ২০.২৩ শতাংশ দুর্নীতি তদন্তের সময়সীমা এবং ৯.২৪ শতাংশ মামলার তদন্তের সময় ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।

এসব ছাড়াও বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৫ সালে দায়ের ৫৬ মামলার তদন্তও শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে দুদক।

প্রায় ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও বেসিক ব্যাংকের মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি দুদক। গত মাসে ওই ৫৬ মামলার তদন্ত শেষ করতে দুদককে তিন মাস সময় বেধে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সময়সীমার মধ্যে তা করতে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছিলেন হাইকোর্ট।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাবান মহলের প্রভাবে বেসিক ব্যাংকের মামলার মতো আরও অনেক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত স্থগিত রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদন্তে বিলম্ব হলে বিচারের পর্যায়ে থাকা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা উপকৃত হয়ে থাকেন। তদন্ত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই সময়ের মধ্যে অনেক সুযোগ পেয়ে যান সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজরা।

দুদক সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, সংশ্লিষ্ট নথি ও প্রমাণ সংগ্রহসহ বিভিন্ন কারণে অনুসন্ধান ও তদন্ত বিলম্বিত হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচারাধীন তদন্ত শেষ করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে কমিশন।