প্রচ্ছদ ›› অপরাধ

‘আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম’, বললেন কক্সবাজারের সেই জজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ জুলাই ২০২৩ ১৫:০৯:০১ | আপডেট: ৯ মাস আগে
‘আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম’, বললেন কক্সবাজারের সেই জজ

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন না মঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইনভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একই দিনে জামিন দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে হাইকোর্টে হাজির হন কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। এর আগে বুধবারও একই ইস্যুতে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে আদালতে হাজির হয়েছিলেন তিনি।

আজ হাইকোর্টে পৌঁছালে তার বক্তব্য জানতে ও ছবি তুলতে যান সংবাদকর্মীরা। এ সময় রেগে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে কক্সবাজারের জেলা জজ বলেন, ‘আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন। আমি আল্লাহ পাকের কাছে বিচার দিলাম।’

আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে করা এক মামলায় আসামিদের জামিন দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আজ হাইকোর্টে হাজির হন মোহাম্মদ ইসমাইল। এ বিষয়ে বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়।

এর আগে লিখিত বক্তব্যসহ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি বুধবার হলফনামা আকারে হাইকোর্টে দাখিল করেছিলেন তার আইনজীবী। কিন্তু যথাযথ না হওয়ায় তা নতুন করে দাখিলের জন্য সময় চেয়ে গতকালই তার আইনজীবী হাইকোর্টে আরজি জানান। পরে আদালত শুনানির জন্য আজকের দিন রাখেন।

আজ সকালে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নতুন করে একটি আবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন মোহাম্মদ ইসমাইলের আইনজীবী। শুনানিতে মোহাম্মদ ইসমাইলের আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ তার মক্কেলের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমার অবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করেন। মোহাম্মদ ইসমাইলকে অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

একপর্যায়ে মোহাম্মদ ইসমাইলের অপর আইনজীবী আদালতে সাত দিনের সময়ের আরজি জানান। আদালত ২৭ জুলাই শুনানির পরবর্তী তারিখ রাখেন। আজ আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

এর আগে গত ২১ জুন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন না মঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইনভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একই দিনে জামিন দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে তলব করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে আইনজীবী বলেন, জমি দখল নিয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটনার অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ নয়জনের বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রিনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন।

মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলে হাইকোর্ট ১১ এপ্রিল তাদের ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়ে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের সেই আদেশ মোতাবেক গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জামিন চান। আদালত ৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু একই দিন আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তখন জেলা ও দায়রা জজ তাদেরকে জামিন দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন রিনা। তার এই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট জেলা ও দায়রা জজকে তলব করে আদেশ দেন।

আইনজীবী বলেন, ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে ৯ আসামি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন।

এ ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্য কাগজপত্রের প্রত্যায়িত অনুলিপি বা প্রত্যায়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। আসামির হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়—আদেশে উল্লেখ করেছেন জেলা জজ। অথচ ৯ আসামি একমুহূর্তও হাজতে ছিলেন না।

শুনানিতে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলে জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিলেন—এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে আসতে বলেন আদালত।