রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টিপ পরায় এক নারীকে হেনস্তার ঘটনায় ইতোমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের ড্রেস পরিহিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেই সদস্যকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। তবে উত্যক্তকারী ওই ব্যক্তিকে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ
শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর ফার্মগেটের সেজান পয়েন্ট শপিং মলের সামনে নারী হেনস্থার এ ঘটনাটি ঘটে। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বর্তমানে পুরো রাজধানী ব্যক্তিগত ও সরকারিভাবে সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকা সত্ত্বেও ৩৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কেন শনাক্ত করা যায়নি অভিযুক্ত সেই ব্যক্তিকে।
টিপকাণ্ডের মতো ঘটনার পর নগরীর কেন্দ্রস্থলের মতো একটি জায়গায় সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন দেখা গেছে।
পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত অভিযুক্তকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন না। ডিউটিরত যারা ছিলেন তারাও এ বিষয়ে তেমন কোন তথ্য দিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, মেট্রোরেলের কাজের কারণে এলাকাটিতে ভাঙচুর ভাঙা-গড়ার কাজ চলছে। যার কারণে অনেক অংশ সিসি ক্যামেরা আওতার বাইরে রয়েছে। যে অংশটিতে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানেও সিসি ক্যামেরা ছিল না।
''তবুও তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দারের লিখিত অভিযোগের পরই ঘটনাস্থলের আশেপাশে বেশকিছু সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি। তবে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে আশা করছি, শিগগির অভিযুক্তকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।''
ভুক্তভোগী ওই নারী তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক। ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, হেঁটে কলেজে যাওয়ার সময় পাশ থেকে পুলিশের পোশাক পরিহিত মোটরসাইকেলে থাকা মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি তাকে ‘টিপ পরছোস কেন’ বলে গালি দেয়। প্রতিবাদ জানালে এক পর্যায়ে তার পায়ের ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে চলে যান সেই ব্যক্তি।
ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাকে ওই পুলিশ সদস্য হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই নারী।
এদিকে বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তির এই কাণ্ড। অনেকে আবার পুলিশ বাহিনীকে কটাক্ষ করে পোস্ট দিচ্ছেন ফেসবুকে।
তবে পুলিশ সদস্যের এ কাণ্ডে কী ভাবছেন পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তাদের বাহিনীর জন্য এমন একটি ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
পুলিশ হেডকোয়াটার্স-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া জিকু দ্য বিজনেস পোস্ট-কে বলেন, পুলিশ সদস্যের এ আচরণ করা মোটেও ঠিক হয়নি। একজন নারী টিপ পরবেন কী পরবেন না সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। ইচ্ছে হলে সে টিপ পরতেই পারে। নারীরা টিপ পরতে পারবে না এমন কথা কোথাও লেখা নেই। একজন নারী তার অভিরুচিমতো টিপ পরবে। সেটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে সেই পুলিশ সদস্য যে আচরণ করেছেন দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে সেটি মোটেও কাম্য নয়।