প্রচ্ছদ ›› অপরাধ

টিপকাণ্ডে লজ্জিত পুলিশ সদস্যরা

আফরিন আপ্পি
০৩ এপ্রিল ২০২২ ১৭:০৯:৫৬ | আপডেট: ৩ years আগে
টিপকাণ্ডে লজ্জিত পুলিশ সদস্যরা

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টিপ পরায় নারীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারী তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক।

ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, হেঁটে কলেজে যাওয়ার সময় পাশ থেকে পুলিশের পোশাক পরিহিত মোটরসাইকেলে থাকা মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি তাকে ‘টিপ পরছোস কেন’ বলে গালি দেয়। প্রতিবাদ জানালে এক পর্যায়ে তার পায়ের ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে চলে যান সেই ব্যক্তি।

শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাকে ওই পুলিশ সদস্য হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই নারী। ঘটনাটি তার কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি থানায় অভিযোগ করেন তিনি।

বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তির এ কাণ্ড। অনেকে আবার পুলিশ বাহিনীকে কটাক্ষ করে পোস্ট দিচ্ছেন ফেসবুকে।

তবে পুলিশ সদস্যের এ কাণ্ডে কী ভাবছেন পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তাদের বাহিনীর জন্য এমন একটি ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

পুলিশ হেডকোয়াটার্স-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া জিকু দ্য বিজনেস পোস্ট-কে বলেন;

পুলিশ সদস্যের এ আচরণ করা মোটেও ঠিক হয়নি। একজন নারী টিপ পরবেন কী পরবেন না সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। ইচ্ছে হলে সে টিপ পরতেই পারে। নারীরা টিপ পরতে পারবে না এমন কথা কোথাও লেখা নেই। একজন নারী তার অভিরুচিমতো টিপ পরবে। সেটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে সেই পুলিশ সদস্য যে আচরণ করেছেন দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে সেটি মোটেও কাম্য নয়।

বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাজনক উল্লেখ করে নেত্রকোনার দুর্গাপুর সার্কেলের এএসপি মাহমুদা শারমিন নেলী দ্য বিজনেস পোস্ট-কে বলেন; সাজসজ্জা ফ্যাশন, এসব জিনিস যার যার ব্যক্তিগত অভিরুচি। যে যেমন ইচ্ছে ফ্যাশন করবে। এ বিষয়ে কারো মন্তব্য করার কোনো সুযোগ নেই। আমাকে কেউ বাজে মন্তব্য করলে বিষয়টি আমিও ইতিবাচকভাবে নেবো না।

যাকে মন্তব্য করেছেন তিনি একজন শিক্ষিকা হোন বা যে-ই হোন না কেনো পুলিশ সদস্য যে আচরণ করেছে তা মোটেও পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে না।

যেহেতু তিনি দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন তার সে সময় নিজ দায়িত্বের প্রতি-ই মনোনিবেশ করা উচিত ছিলো। তার এ আচরণের কারণে আমরা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা খুবই লজ্জিত।

ঝালকাঠির রাজাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ রানা বলেন;

পুলিশ সদস্য যে আচরণ করেছে সেটি আসলে ভালো হয়নি। পুলিশ বাহিনীতে প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার সদস্য রয়েছে। আমাদের প্রশিক্ষণের সময় যেভাবে তৈরী করা হয় সবাই আসলে সেভাবে তৈরী হতে পারে না।

আমাদের ঊর্ধ্বতন যারা রয়েছেন তারা আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেন সেসব মেনে সবাই চলতেও পারে না। আচার-আচরণ মননশীলতা উন্নয়নের যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় সেভাবে সবাই কাজও করতে পারে না। তবে আশার কথা হচ্ছে পরিবর্তন যে একেবারেই হচ্ছে না বিষয়টা তেমন নয়। পরিবর্তন হচ্ছে ভালোর চর্চা হচ্ছে। তবে বড় এই বাহিনীকে শাণিত করে গড়ে তুলতে এখনো অনেক সময় লাগবে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শেরে-বাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষিকা গাড়ির নম্বরের কয়েকটি ডিজিট বলতে পেরেছেন কিন্তু তা থেকে গাড়িটি শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় যাচাই-বাছাইয়ের চেষ্টা করছি।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে তৎপর আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আফরিন আপ্পি