প্রচ্ছদ ›› অপরাধ

পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৩৭:৩৯ | আপডেট: ৭ মাস আগে
পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও কানাডায় ৮৩ কোটি টাকা পাচারের মামলায় গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে অপর ১৩ আসামির সাত বছর করে কারাদণ্ডের রায়ও ঘোষণা করেছেন আদালত।

রোববার ঢাকার দশ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম আসামিদের দণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দণ্ডিত অপর আসামিরা হলেন- অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা এবং পিকে হালদারের মা লিলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি। দণ্ডিতদের মধ্যে অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা কারাগারে রয়েছেন। বাকীরা পলাতক। রায় ঘোষণার সময় কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, পিকে হালদারকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছর এবং মানিলন্ডারিং আইনে ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অপর আসামিদের অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তার জন্য ৩ বছর এবং মানিলন্ডারিং সহায়তার জন্য ৪ বছরর কারাদণ্ড দিয়েছেন। আদালত পিকে হালদারের সাজা একটি পর একটি চলবে বলে উল্লেখ করায় তাকে ২২ বছরেরই কারাভোগ করতে হবে বলে আইনজীবী জানান। গ্রেপ্তার হওয়ার দিন থেকে তার সাজা কার্যকর হবে বলেও তিনি জানান। অপর আসামিদের সাজা এক সঙ্গে চলবে মর্মে আদালত উল্লেখ করায় ৪ বছর সাজাই খাটতে হবে বলে তিনি জানান।

আদালত সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার আসামিরা প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে কারাগরে রয়েছেন। তাই তারা আর ৬ মাসের মতো কারাভোগ করলেই তারা মুক্তি পাবেন।

প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, প্রক্যেক আসামি রায়ে আলাদা আলাদা অর্থদণ্ড করেছেন। যা এখন সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

এর আগে গত ৪ অক্টোবর এ মামলার যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৮ অক্টোবর দিন ঠিক করেন আদালত।

উল্লেখ্য, গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের বিরুদ্ধে মোট ৫২ টি মামলা রয়েছেন। যার প্রথম মামলায় রায় রোববার ঘোষণা করল আদালত।

মামলায় ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালত ১০০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। মামলার নথি থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি শুধু পি কে হালদারকে আসামি করেই এ মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ। মামলাটি তদন্তের পর গত বছর ২৪ নভেম্বর পিকে হালদারসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। চলতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। এ বছর ২২ সেপ্টেম্বর মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়।

মামলার চার্জশিটে বলা হয়, আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় তার নিজ নামে-বেনামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানী/কাগুজে কোম্পানী/ব্যক্তিবর্গের নামে-বেনামে তার মাঠ আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৪২৫ কোটি ৯৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ দশমিক ২৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭(১) ধারায় এবং বর্ণিত অবৈধ অর্জিত সম্পদসহ নিজের অবৈধ সম্পদের প্রকৃত অবস্থান গোপন করার হীন উদ্দেশ্যে নিজ নামে-বেনামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানী/কাগুজে কোম্পানী/ব্যক্তিবর্গের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে পরিচালিত ১৭৮ টি ব্যাংক হিসাবে ৬০৮ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ১২৫ দশমিক ২ টাকা জমা ও ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৫১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫৯ দশমিক ৫৭ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেন করত হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তর করে এবং তার সহোদর ভাই আসামি প্রিতিশ কুমার হালদারসহ অন্যান্যদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ হতে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত হয়ে কানাডায় ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ দশমিক ৪১ কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমান অর্থ পাচার করতঃ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাঙ্কিযাগ্য অপরাধ করেছেন। এছাড়া আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রশান্ত কুমার হালদারকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বর্ণিত পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জন করতে সহযোগিতা করে এবং বর্ণিত অবৈধ অর্জিত সম্পদের প্রকৃত অবস্থান গোপন করার হীন উদ্দেশ্যে নিজেদের নামে-বেনামে হস্থান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে ছদ্ধাবৃত্ত করে দন্ডবিধি’র ১০৯ ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।