প্রচ্ছদ ›› অপরাধ

বিদেশ থেকে উপহারের মিথ্যা নাটক, কাস্টমস অফিসার সেজে প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ মে ২০২৩ ২০:০৭:৩২ | আপডেট: ১০ মাস আগে
বিদেশ থেকে উপহারের মিথ্যা নাটক, কাস্টমস অফিসার সেজে প্রতারণা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি পরিচয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তুলত একটি প্রতারক চক্র। পরে বন্ধু হিসেবে বিদেশ থেকে উপহার পাঠানোর কথা বলত। সেই সূত্র ধরে চক্রের আরেকজনকে বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউজের প্রতিনিধি সাজিয়ে ওই ‘সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধু’কে ফোন করে পার্সেল আকারে আসা উপহারের জন্য দাবি করা হতো বড় অঙ্কের টাকা। এমন প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুই বিদেশি নাগরিকসহ প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারকৃতরা হল নাইজেরিয়ান নাগরিক চালর্স ইফেনাদে ডেজু (২৭), ফাঙ্ক কোকো ওবিরিকস (৩৫), ও দুই বাংলাদেশি শফি মোল্লা (৩৬), মোছা. মৌসুমি খাতুন (২৭)।

বৃহস্পতিবার ২৫ মে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান থানাধীন এলাকায় বসবাসরত একজন নারীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ইনস্টাগ্রাম) বিদেশী এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে বিদেশী ব্যক্তি গত ১৭ মে ভিকটিমের ঠিকানায় একটি পার্সেল পাঠিয়েছে বলে জানায় এবং তা এয়ারপোর্ট থেকে সংগ্রহ করার জন্য বলে। পরদিন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কাস্টমসের পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা এক নারী তাকে জানায় তার নামে একটি অতি মূল্যবান পার্সেল বিমানবন্দরে এসেছে।

পার্সেলটি ডেলিভারি করতে কাস্টমস্ চার্জ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। ওই নারী অজ্ঞাত নামা ব্যক্তির দেয়া ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা দেয়। সিকিউরিটির জন্য আরও ৩০ হাজার টাকা জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। মহিলার কথা অনুযায়ী উক্ত একাউন্টে আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠায় এবং পার্সেলের জন্য উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করলে উক্ত মহিলা জানায় তার পার্সেল তার বাসায় পৌঁছে যাবে। এরপর নানা কথা বলে আরও ৮ হাজার ৩২০ টাকা বিকাশের মধ্যমে পাঠাতে বললে ভিকটিম তার আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করে।

র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, গতকাল র‌্যাব একটি দল রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধারা আবাসিক এলাকা এবং কদমতলীর শামীমবাগ এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দুই বিদেশি নাগরিকসহ প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি মোটর সাইকেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত আটটি মোবাইল ফোনসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া ইনভয়েস উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেটে ঘেটে ব্যবসয়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্তসহ সহজ সরল মানুষকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। ভিকটিমদের কাছে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিম’কে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠাতে চায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভিকটিমকে ফোন করে। পরে ভিকটিম বন্ধুত্বের মান রাখতে উক্ত পার্সেল গ্রহণ করার জন্য প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়।

বিদেশী দুই প্রতারকদের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতারক চক্রের বিদেশী নাগরিকেরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় অবস্থান করে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশা শুরু করে। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগিদের নিয়ে এ অভিনব প্রতারণার সাথে জড়িয়ে পড়ে।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।