প্রচ্ছদ ›› শিক্ষা

কী কারণে কমছে বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা?

আফরিন আপ্পি
০৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:১১:৫৪ | আপডেট: ২ years আগে
কী কারণে কমছে বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা?

লেখাপড়া শেষে বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ে স্বপ্ন দেখে একটি সরকারি চাকরির। সেই দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে বিসিএস। অন্তত হালের ক্রেজ যেনো তা-ই বলে। তবে গত কয়েকবছরের পরিসংখ্যান যেনো বলছে উল্টো কথা। প্রতিবছর কমছে বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা। ঠিক কী কারণে আবেদনে এই ভাটা সে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছে বিজনেস পোস্ট।

শিক্ষার্থীরা মনে করছেন অধিক পরিশ্রমেও কাঙ্খিত ফল না পাওয়া, অল্প সংখ্যক আসন, বার বার পরীক্ষা দিয়েও সফলতার দেখা না পাওয়া, এসব কারণে কমছে বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিয়মিত পরীক্ষাই কমিয়েছে আবেদনের হার।

বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এনায়েতউল্লাহ বলেন; “আমি দুইবার বিসিএস দিয়ে এখন দেশান্তরি। সপ্তাহে যা আয় হয় তা বিসিএসের বেতনের থেকে অনেক বেশি। ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন যে কত শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর ঘুম হারাম করছে, মূল্যবান সময় নষ্ট করছে তার শেষ নেই।”

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী  আপন বিশ্বাস বলেন; “এ সংখ্যা যত কমবে দেশ তত বেশি সৃজনশীল ও উন্নত মেধার দিকে ধাবিত হবে। এই বিসিএসের পেছনে লাখ লাখ কর্মক্ষম তরুণ বছরের পর বছর অলস পড়ে থাকে। পরে নিমজ্জিত হয় হতাশায়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী  ওয়াসিক বিল্লাহ আসিফ বলেন; “এটা খুব ভালো লক্ষণ। একটা দেশ কেবল আমলা আর মুখস্থবিদ্যা দিয়ে বেশিদূর যেতে পারে না। দেশে বিজ্ঞান, গবেষণা আর প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে তরুণসহ গ্র‌্যাজুয়েটদের এগিয়ে আসার সময় এখনই।”

তবে বিষয়টিকে অন্যভাবে ব্যাখা করেছেন শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন; “আবেদনকারীর সংখ্যা ৪ নাকি ৫ লাখ সেটা কোনো বিষয় না। কারণ প্রতিযোগিতাটা হয় মূলত ১ লাখের মধ্যে।”

একই কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষার্থী মাহমুদ প্রিন্স। প্রিন্সের ভাষ্য: “তীব্র প্রতিযোগিতা হয় অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে। আর বাকিরা দেখা যায় যেহেতু সুযোগ আছে তাই পরীক্ষায় অংশ নেয়। অনেকে লেখাপড়াও করে ঠিক-ই কিন্তু প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকায় সফল হতে পারে না।”

এ বিষয়ে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী বিজনেস পোস্ট’কে বলেন; “এখন আর কেউ শখ করে বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছে না। নিয়মিত পরীক্ষা হওয়ায় শখের আবেদনকারী কমে গেছে। যাদের ন্যূনতম সম্ভাবনা আছে শুধু তারাই পরীক্ষা দিচ্ছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিএসসির একজন কর্মকর্তা বিজনেস পোস্ট’কে বলেন; “বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা কমেছে বিষয়টি আসলে তেমন নয়। অন্যান্য বিসিএসে আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো হলেও এবার সেটি করা হয়নি। সেজন্য আবেদন কম হতে পারে। আর বিসিএস আগে অনেকবছর পর পর হতো তখন অনেক ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একসাথে আবেদন করত। যে কারণে আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক বেশি হত। কিন্তু এখন প্রতিবছরই বিসিএস হচ্ছে সেজন্য আবেদনকারীর সংখ্যা কম হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।”

গত ছয় বছরে মোট আটটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি। এর মধ্যে ছয়টি সাধারণ ও দুটি বিশেষ বিসিএস। এর মধ্যে ৩৯তম ও ৪২তম ছিল বিশেষ। এর মাধ্যমে শুধু চিকিৎসক নেয়া হয়। আর বাকি ৬ বিসিএসের মধ্যে সবচেয়ে কম আবেদন জমা পড়েছে ৪৫তম বিসিএসে। এ বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার।

গত ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদনের জন্য প্রায় এক মাস সময় পান প্রার্থীরা। গত শনিবার ছিল আবেদনের শেষ সময়।

আরও পড়ুন - দিন শেষে বিসিএস একটি চাকরি

পিএসসি সূত্রে জানা যায়;  ৪৪তম বিসিএসে মোট আবেদন করেছিলো ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন। অর্থাৎ ৪৪ তম থেকে ৪৫তম তে আবেদন কম জমা পড়েছে ৩২ হাজার ৭১৬টি।

৩৮তম বিসিএসে আবেদন করেছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী। ৪০তম বিসিএসে ৪ লাখ ১২ হাজার প্রার্থী। ৪১তম বিসিএসে রেকর্ডসংখ্যক ৪ লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থীর আবেদন জমা পড়েছিল। ৪৩তম বিসিএসে আবেদন জমা পড়ে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০টি।

আবেদনকারীর সংখ্যা থেকে দেখা যায়, সবশেষ ছয়টি সাধারণ বিসিএসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছিল ৪১তম বিসিএসে। আবেদনের হিসাবে ৪৩তম বিসিএস দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থায় আছে।

আরও পড়ুন - চরে কৃষি কাজে এগিয়ে নারীরা