শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে করা অনশনের চতুর্থ দিনে ২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৬৯ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগ না করায়, শিক্ষার্থীরা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এই তারা অনশন ভাঙবেন না।
জানা যায়, ২৪ জন অনশনে বসলেও বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে একজন বাসায় চলে গেছেন। আজ সকাল পর্যন্ত বাকি ২৩ জনের মধ্যে ১৬ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া হাসপাতাল ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রায় সবার শরীরে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে শাবিপ্রবিতে দায়িত্বপালনরত চিকিৎসক দলের সদস্য মো. মোস্তাকিম বলেন, আমরা ১৫ জন চিকিৎসক তাদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। এখানে ১২ শিক্ষার্থী অনশনরত অবস্থায় আছেন। তাদের মধ্যে কারো গ্লুকোজ লেভেল কমে গেছে। কারো ব্লাড প্রেশার লো হয়ে গেছে। আমরা তাদের স্যালাইন দিয়েছি। যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের মেডিকেলে রেফার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত, রাতে বেশি শীত থাকায় তার শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। অনেকের পালস বেশি হচ্ছে, দীর্ঘ সময় না খাওয়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। এভাবে না খেয়ে থাকলে শারীরিক সমস্যা আরও বাড়বে।
অন্যদিকে, শুক্রবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সঙ্গে বসে কথা বলতে চান। এজন্য মন্ত্রী তাদেরকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান। প্রথমে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল ঢাকায় যাওয়ায় কথা বললেও পরবর্তীতে অনলাইনে অথবা মন্ত্রীকে সিলেটে এসে আলোচনার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ঢাকায় না গেলেও শিক্ষকদের পাঁচ সদস্যের একটি দল মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ঢাকায় গেছেন বলে জানা যায়।
এর আগে গত বুধবার বেলা ৩টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ২৪ জন শিক্ষার্থী এ অনশন অংশ নেন। তারমধ্যে ১৫ জন ছেলে এবং ৯ জন মেয়ে রয়েছেন। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ১জন পারিবারিক সমস্যার কারণে বাড়িতে চলে যান।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী।
গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার ঘোষণা দিলেও, শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।