সুরাইয়া জাহান, একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। কিন্তু আর দশজন শিক্ষার্থীর মতো নন সুরাইয়া। তার মুখের ভাষা অস্পষ্ট, ভাববিনিময় করতে হয় ইশারায়। এমনকি হাত অকেজো থাকায় সুরাইয়াকে লিখতে হয় পা দিয়ে। পা দিয়ে লিখেই সমন্বিত গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে শেরপুরের এই অদম্য শিক্ষার্থী।
রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে সমন্বিত গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের ২০ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এদিন জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেফমুবিপ্রবি) কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় সুরাইয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ২৮ নম্বর কক্ষে মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে পরীক্ষা দেন সুরাইয়া।
এদিন সকালে শেরপুর থেকে বাবা ছফির উদ্দিন ও মা মুর্শেদা ছফিরের সঙ্গে বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে আসেন সুরাইয়া। তাদের গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলা সদরের আন্দারিয়া সুতির পাড়। ছফির উদ্দিন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক।
শেরপুর মডেল গার্লস কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪ পেয়েছেন সুরাইয়া। একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৪.১১।
সুরাইয়ার মা মুর্শেদা ছফির জানান, সুরাইয়ার ভাষা অস্পষ্ট। ইশারায় ভাববিনিময় করতে হয়। হাত অকেজো থাকায় পা দিয়ে লিখে ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তার মেয়ে।
তিনি আরও বলেন, তিন মেয়ের মধ্যে সুরাইয়া বড়। দ্বিতীয় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই সুরাইয়া জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু তার ইচ্ছা পড়াশোনা করার। আজ এ অবস্থানে আসার পেছনে আমাদের রয়েছে নানা সংগ্রামের গল্প। নানামুখী সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও আমরা তাকে উৎসাহ দিয়েছি। তাকে নিয়ে কখনই আমরা মন খারাপ করিনি।
এসময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সুরাইয়ার মা বলেন, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং হলে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল পরিদর্শন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ এবং ট্রেজারার মোহাম্মদ আবদুল মাননান। এসময় তারা সুরাইয়ার সার্বিক খোঁজখবর নেন।
উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অদম্য উৎসাহ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ভালো করছে। তাদের এ হার না মানা মনোভাব অবশ্যই প্রশংসনীয়। ’
‘সুরাইয়াকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকলে যেকোনো বাধার মুখেও পড়াশোনা করা যায়। এর উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয়া এ ছাত্রী,' যোগ করেন তিনি।