প্রচ্ছদ ›› শিক্ষা

ফ্যাশনে নারী নেতৃত্বকে বেগবান করবে ‘এইচএসবিসি-এইউডাব্লিউ স্কুল অফ অ্যাপারেল’

নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৬:৪৩ | আপডেট: ১ year আগে
ফ্যাশনে নারী নেতৃত্বকে বেগবান করবে ‘এইচএসবিসি-এইউডাব্লিউ স্কুল অফ অ্যাপারেল’

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডাব্লিউ)-এর সাথে যৌথ উদ্যোগে এইচএসবিসি উদ্বোধন করলো ‘এইচএসবিসি-এইউডাব্লিউ স্কুল অফ অ্যাপারেল’-এর এক বছর মেয়াদি মাস্টার্স ইন অ্যাপারেল অ্যান্ড রিটেইল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম।

দি হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন (এইচএসবিসি) এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন রোববার যৌথভাবে ‘এইচএসবিসি-এইউডাব্লিউ স্কুল অফ অ্যাপারেল অ্যান্ড রিটেইল ম্যানেজমেন্ট’ প্রোগ্রাম উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে। এটি অ্যাপারেল ও রিটেইল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে এক বছর মেয়াদি একটি মাস্টার অফ সায়েন্স প্রোগ্রাম।

এইচএসবিসি-র জনকল্যাণমূলক সহায়তায় অর্থায়নকৃত এই প্রোগ্রামটি একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একাডেমিক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হবে। এই কমিটি’র সভাপতিত্ব করবেন নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কেলগ স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের প্রাক্তন ডিন- ড. দীপক সি জৈন (যিনি ফ্রান্সের ফন্টেইনব্লা-তে ইনসিড-এর ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন)। এই মাস্টার্স প্রোগ্রামটি তরুণ প্রজন্মের নারী পেশাজীবীদের ফ্যাশন, মার্চেন্ডাইজিং, সাপ্লাই-চেইন ম্যানেজমেন্ট, ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলবে। ক্রমবর্ধমান পোশাক শিল্পের পরিচালনায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করাই এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য।

দি র‌্যাডিসন-ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ হোটেলে একটি জমকালো অনুষ্ঠানে এই প্রোগ্রাম-এর উদ্বোধন করা হয়। ‘এইচএসবিসি-এইউডাব্লিউ স্কুল অফ অ্যাপারেল: লিডিং দি ফিউচার অফ ফ্যাশন’ শিরোনামের এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যবসায়িক সংস্থার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এইচএসবিসির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হেড অফ কমার্শিয়াল ব্যাংকিং অ্যামান্ডা মারফি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ, বিজিএমইএ এর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, ডেনমার্কের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পল নাইরাপ রাসমুসেন, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের সিনিয়র অফিসিয়াল ক্যাটরিনা ফটোভাট, দি ডেইলি স্টার এর সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য ড. রুবানা হক, এইচএবিসি বাংলাদেশ এর সিইও মো: মাহবুব উর রহমান এবং শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি ভিডিও-বার্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।

এইউডাব্লিউ এর ভাইস চ্যান্সেলর রুবানা হক আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, “এখন বাংলাদেশের অ্যাপারাল ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন নিজেদের গড়ে তোলা প্রতিভাবান কর্মী, যা এই সেক্টরের প্রয়োজন মেটাবে। তাই, এই জনগোষ্ঠিকে কর্মসংস্থানের এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত করবার জন্য এইচএসবিসি বাংলাদেশের সাথে একত্রে স্কুল অফ অ্যাপারেল শুরু করতে পেরে আমরা আনন্দিত।”

এইচএসবিসি-র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হেড অফ কমার্শিয়াল ব্যাংকিং অ্যামান্ডা মারফি বলেন, “বিকাশমান প্রযুক্তি, পরিবর্তিত ভোক্তা আচরণ এবং টেকশই উন্নয়নের গুরুত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে পোশাক শিল্পের দ্রুত পরিবৃদ্ধি হচ্ছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর সাথে সম্মিলিতভাবে এইচএসবিসি-এইউডব্লিউ স্কুল অফ অ্যাপারেল এবং মাস্টার্স প্রোগ্রামটি চালু করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি শিল্পে ক্রমাগত উদ্ভাবন চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধাবীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী। এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, প্রোগ্রামটি নারীদের পেশাদার ও নেতৃত্বেও দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করবে। এটি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নারীদের বিভিন্ন সুযোগ গ্রহণকে আরও সহজ করে তুলছে এবং বাংলাদেশ ও এর জনগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করছে।”

এই প্রোগ্রামটির লক্ষ্য হলো পোশাক খাতের ব্যবসায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষিত একদল নারী গ্র্যাজুয়েটকে গড়ে তোলা। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত করে এই প্রোগ্রাম স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মেধাবীদের গড়ে তুলবে। একই সঙ্গে এটি দেশের মধ্যে স্থায়ী দক্ষতা গড়ে তোলায় তাদের সক্ষম করার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের সামাজিক লক্ষ্যেও অবদান রাখবে। প্রোগ্রামটির মূল বৈশিষ্ট্য হবে একাডেমিক উৎকর্ষ, শিল্পখাতে প্রাসঙ্গিকতা এবং সামাজিক তাৎপর্য। এই প্রোগ্রাম-এর গ্র্যাজুয়েটরা প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ হবে এবং উন্নততর যোগাযোগ দক্ষতার মাধ্যমে তারা অ্যাপারেল ও রিটেইল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক প্রয়োজনীয় আধুনিক ও সমসাময়িক জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করবে। এর উদ্দেশ্য হলো সেরা মানের শির্ক্ষাীদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি মানসম্পন্ন শিক্ষক, অত্যাধুনিক পাঠ্যক্রম এবং শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ নিশ্চিত করা। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে অধিভুক্তির ফলে একাডেমিক প্রোগ্রামটি একটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে। প্রোগ্রামটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্বব্যাপী সহযোগীদের সাথে হাতে-কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। সার্বিকভাবে এটি একাডেমিয়া ও শিল্পখাতের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবে।

প্রোগ্রামটির আওতায়, এইউডব্লিউ-এর শিক্ষার্থীরা ১৩টি কোর্সে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। প্রথম বছরে এই প্রোগ্রামে ৫০জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে। ম্যাক ল্যাব ডিজাইন, কারিকুলাম, ফ্যাকাল্টি, আইটি ও ক্লাসের অবকাঠামোর ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানসহ সম্পূর্ণ স্কুলটি স্থাপনে সহায়তা করবে এইচএসবিসি।

বৈশ্বিক পোশাক সাপ্লাইচেইন-এ বাংলাদেশের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। গত ৪০ বছরে পোশাক শিল্প দেশের বৃহত্তম শিল্পে পরিণত হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের রপ্তানি রাজস্বের ৮০ শতাংশের বেশি অর্জিত হয়। এই খাতে কাজ করেন ৪০ লক্ষের বেশি শ্রমিক, যার ৬৫ শতাংশের বেশিই নারী। এর ফলে, পোশাক খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতির অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশকে একটি আন্তর্জাতিক পোশাক গন্তব্য হিসেবে উন্নীত করতে কঠোর একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ এবং একাডেমিয়া ও শিল্পখাতের মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজন।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) বাংলাদেশে অবস্থিত একটি স্বতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রযুক্তিগত ও মানবতাবাদী লিবারেল আর্টস ও বিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষা ও নেতৃত্বের উন্নয়নে কাজ করছে এইউডব্লিউ। এইউডব্লিউ এমন নারীদের গ্র্যাজুয়েট হিসেবে গড়ে তুলতে চায় যাঁরা দক্ষ ও উদ্ভাবনী পেশাজীবী। যে সকল ব্যবসা ও সমাজে তারা সেবা প্রদান করবে সেখানে তাঁরা নেতৃস্থানীয় হবে এবং এশিয়াসহ সারা বিশ্বে আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগ এবং টেকসই মানব ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবে।

নিজেদের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সমাজিক সহায়তা প্রদানে এইচএসবিসি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এরই একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো মানুষের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পেশাগত দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করা। দক্ষ জনবল দিয়ে বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নতির জন্য ‘ফিউচার স্কিলস’ উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজের জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করা এইচএসবিসি-র লক্ষ্য। পোশাক খাতসহ কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও প্রসারও করে আসছে এইচএসবিসি। কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়েও কাজ করে আসছে এইচএসবিসি।