প্রচ্ছদ ›› শিক্ষা

বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ জুন ২০২৩ ১৪:২৭:৩৩ | আপডেট: ১০ মাস আগে
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা

দেশে প্রথমবারের মতো অটোমেশন চালু করায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পছন্দমত মেডিকেলে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পূর্বে ভর্তির নিয়মানুযায়ী দেশে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। এ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির পর প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ ছিলো। এতে শিক্ষার্থীরা পছন্দমত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারতো।

চলতি বছর বেসরকারি মেডিকাল কলেজে ভর্তির বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়। সংশ্লিষ্টদের তীব্র বিরোধিতার মধ্যে প্রথমবারের মত অটোমেশন চালু করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের প্রথম ৫টি মেডিকেল কলেজে ভর্তির চয়েস রাখা হয়। পরবর্তীতে এই নীতি পরিবর্তন করে ছেলেদের জন্য ৬০টি মেডিকেল কলেজ ও মেয়েদের জন্য ৬৬টি চয়েস রাখা হয়।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এ ব্যাপারে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে। এরপরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১৩ জুন কলেজ ঠিক করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠায়।

এতে দেখা গেছে, তাদের দেয়া পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাননি অনেকে। চয়েস মূল্য না দিয়ে ইচ্ছামত কলেজ নির্বাচন করে শিক্ষার্থীদের ক্ষুদে বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে কোন নীতিতে বা পদ্ধতি অনুসরণ করে কলেজ নির্বাচন করা হয়েছে তা অবহিত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের ভর্তির তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। যা নিয়ে দেশের মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিবাকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, মেডিকেল কলেজের সঙ্গে সংশিষ্ট সকলে অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করে পূর্বের পদ্ধিততে ফিরে যাওয়ার দাবি করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্বাচনকৃত ভর্তিচ্ছু তালিকায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা ঢাকার বাইরে কোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আবার ঢাকার বাইরের অনেককেই রাজধানীসহ বড় বড় শহরে সুযোগ দেয়া হয়েছে। 

মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের ঘোষিত একটি নীতিমালা রয়েছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডিন ও সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খান বলেন, অটোমেশন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তিতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। সবার মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়েছে। এই বছর ৪৯ হাজার ছাত্রছাত্রী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তার মধ্যে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য যখন আবেদন কল করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে মাত্র ৬ হাজার ৩২০ টি আবেদন পড়েছে ।

বেসরকারি কলেজের আসন সংখ্যা হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০। এতে ১:১ ও হয় নাই। ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে একজনের বিপরীতে পাঁচজন প্রার্থী, কিন্তু প্রকৃত চিত্র একজনের বিপরীতে অনেকক্ষেত্রে একজনও হয়নি। পৃথিবীর কোন দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী সরকার ভর্তি করে দেয়ার নিদর্শন নেই বাংলাদেশের এ ধরনের কোন দৃষ্টান্ত নেই ।

তিনি বলেন, বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে ভারতীয় দূতাবাসের তথ্য মতে প্রথম বর্ষ থেকে ইন্টার্নশিপ পর্যন্ত এই মুহূর্তে বারো হাজার বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে এবং ২০০ মিলিয়নেরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে যেটি বিশ্বের এই সংকটময় মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে। সুতরাং আমি বলব এটা চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের অর্জন।

সকল অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মুজতাহিদ মুহাম্মদ হুসাইন দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন অটোমেশন করাই হয়েছে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে। এবং ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পছন্দের কারণেই মেধা ভিত্তিতে কলেজ পেয়েছে। যে যেভাবে সিরিয়াল দিয়েছে সেভাবেই কলেজ পেয়েছে।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্টুডেন্ট পাচ্ছে না, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি কলেজের মধ্যে সব স্টুডেন্টই ঢাকা মেডিকেল চায়। সবাই কি পায়? তবুও পড়ছে। কারণ মেধার ভিত্তিতেই দেয়া হয়েছে। কেউ যদি মেডিকেলে পড়তে না চায় এখনো ওয়েটিং-এ আছে অনেক। তাদের থেকে আসবে। সমস্যা তো নাই। ৬০ বা ৬৬ কলেজ চয়েস রাখা এখানে কোন ইস্যু না।