ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত, প্রক্টরের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে বুধবার রাত ১২টার দিকে উপাচার্য ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে ছাত্রীরা হলে ফিরে যায়।
বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যায় বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর গোলাম কুদ্দুস লাবলু। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানিয়েছে। আমরা তা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা হলে ফিরে যায়।’
তিনদিন আগে ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের রাতে হলে ফেরার সময়সীমা বেঁধে দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভ দেখা দেয়।
দিনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়। রাতে প্রীতিলতা হলের একদল ছাত্রী এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতারের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিন রাত পৌনে ১০টার দিকে ৩০-৩৫ জন ছাত্রী উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যাত্রা করলে প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা এসে তাদের পথ আটকান। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ওই হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা অবিলম্বে প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন। পরে হল থেকে বেরিয়ে অপর ছাত্রীরা ওই বিক্ষোভে যোগ দেন। শতাধিক ছাত্রী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাসফিয়া জাসারাত নোলক বলেন, ‘যৌন হয়রানির শিকার মেয়েটির সঙ্গে রোববার রাতে যা হয়েছে, তা কালকে আমার সঙ্গেও ঘটতে পারে। রাত ১০টার মধ্যে হল বন্ধ করে এর সমাধান করা সম্ভব না। প্রশাসনের উচিত ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করে এর সলিউশন করা। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই।’
আরেক শিক্ষার্থী আশরাফি নিতু বলেন, ‘মেয়েদের হলে যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, আমরা চাই সেটা উঠে যাক। মেয়েরাই কেন হেনস্তার শিকার হবে? আবার মেয়েরাই কেন সময়সীমার মধ্যে হলে প্রবেশ করতে হবে? আমার প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা জানাই।’
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবিগুলো-
১. ক্যাম্পাসে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দিতে হবে। হল থেকে বের হওয়া বা প্রবেশের এবং মেডিকেলে যাওয়ার সময়সীমা তুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিতে হবে।
২. যৌন নিপীড়ন সেল ভেঙে নতুন কার্যকরী সেল গঠন করতে হবে। সেলে বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য সর্বোচ্চ সময়সীমা থাকবে ১ মাস। সেটি না হলে সেলের শাস্তির বিধান গঠনতন্ত্রে থাকবে।
৩. যৌন নিপীড়ন সেলে চলমান কেসগুলোর বিচার করতে হবে আগামী ৪ কার্যদিবসের মধ্যে।
৪. চার কার্যদিবসের মধ্যে বিচার না হলে প্রক্টরিয়াল বডি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবে।
খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা উপাচার্যের বাংলোর সামনে উপস্থিত হন। পরে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে ছাত্রারী আবারও হলে ফিরে যায়।
বিক্ষোভকারী ছাত্রীরা দাবিগুলো একটি কাগজে লিখে দিলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষর করে গ্রহণ করেন বলেও জানান নোলক। তিনি বলেন, ‘যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চার কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না করে আমরা পুনরায় আন্দোলনে নামবো।’
এর আগে গত রোববার রাত সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসে পাঁচ তরুণের হাতে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হন। নিপীড়নের শিকার ছাত্রীর ভাষ্যমতে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পোশাক ও কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় পাঁচ তরুণ ওই ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন।
এ সময় তার সঙ্গে থাকা এক বন্ধু প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করা হয়। পরে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ রেখে দুজনকে ছেড়ে দেন ওই তরুণেরা। যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রী মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। পরে বুধবার হাটহাজারী থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করে।