প্রচ্ছদ ›› বিনোদন

কানের জমকালো আয়োজনে ইউক্রেনের বিষাদ

বিনোদন ডেস্ক
১৮ মে ২০২২ ১২:২৬:৩৪ | আপডেট: ১ year আগে
কানের জমকালো আয়োজনে ইউক্রেনের বিষাদ

পর্দা উঠলো চলচ্চিত্রের তীর্থস্থান কান চলচ্চিত্র উৎসবের। চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জমজমাট এ আয়োজনের দিকে এখন চোখ বিশ্ববাসীর।

মঙ্গলবার কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৫তম আসরের উদ্বোধন করা হয়। ১২ দিনের এ আয়োজন চলবে ২৮ মে পর্যন্ত।

জমকালো এ আয়োজনের উদ্বোধনীতে অবশ্য বিষাদের কালো ছায়া পড়ে যখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভাষণ দেন। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, সাজানো গোছানো দেশটা রশিয়া ধ্বংস করে দিয়েছে। কান চলচ্চিত্র উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা চান তিনি।

রূপালি পর্দায় গল্পের বৈচিত্র আর লালগালিচার জৌলুসের সম্মিলন দেখতে ফরাসি উপকূল এখন চলচ্চিত্রানুরাগীদের আনাগোনায় মুখর। উৎসবে অংশ নিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজির হয়েছেন নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী, সাংবাদিক, প্রযোজক, তারকা এবং স্রেফ চলচ্চিত্র ভক্তরা।

ফ্রান্সের কানসৈকতে পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন ভার্জিনি এফিরা।

ফ্রান্সের মিশেল আজনভিসুসের ‘কাপেজ’ (কাট) চলচ্চিত্রটি দিয়ে পর্দা উঠেছে এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবের। কান চলচ্চিত্রে উদ্বোধনী চলচ্চিত্র নির্বাচিত হওয়ার পর এ সিনেমার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর আগে সিনেমাটির নাম ছিল ‘ফাইনাল কাট’। তবে সিনেমাটির আন্তর্জাতিক নাম পরিবর্তন করা হয়নি।

এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবার কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৫তম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিলেন। বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে তিনি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হন। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ১৫ মিনিটে এবারের আসরের পর্দা উঠেছে। প্রতিবারের মতো এবারও ফ্রান্সের কান শহরে বসেছে এই জমকালো আয়োজন।

মঞ্চে বড় পর্দায় ভিডিওতে জেলেনস্কি হাজির হলে উপস্থিত সবাই তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। ইউক্রেনের সাবেক এই অভিনেতা নিজের ভাষণে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে সবার সমর্থনের আবেদন জানিয়েছেন। এছাড়াও চলচ্চিত্রে যুদ্ধ ও স্বৈরশাসকদের তুলে ধরতে ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ ও ‘অ্যাপোক্যালিপস নাউ’র মতো ছবির উদাহরণ টেনেছেন জেলেনস্কি। খবর দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ডেইলি মেইলের।

তিনি বলেন, গণকবরে ভরে গেছে ইউক্রেন। আমার দেশে প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আমাদের সাজানো রঙিন দেশ ক্ষত-বিক্ষত-রক্তাক্ত, অথচ বিশ্ব সিনেমা নিশ্চুপ। এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না.. বিশ্ব সিনেমা কি এভাবেই নিশ্চুপ থাকবে, তারা কি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াবে না, বলবে না বন্ধ হোক যুদ্ধ।

জেলেনেস্কি এসময় উদাহরণ টানেন চার্লি চ্যাপলিনের। যিনি ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে হিটলারের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নিজে হিটলার সেজে অভিনয় করেন দ্য গ্রেট ডিক্টেটর সিনেমায়। চ্যাপলিন যখন হিটলার সাজেন তখন বিশ্বকে যুদ্ধ থামানোর কথা বলেন, চ্যাপলিন যখন হিটলার রূপে তখন হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেন। সেদিন সিনেমা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের তীব্র রূপ।

ইউক্রেনের এই নেতা শুরুতে ছিলেন রূপালি পর্দার নায়ক। অভিনেতা হিসেবে বেশ কিছু ছবি এবং টিভি সিরিজে কাজ করেছেন তিনি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে কমেডিয়ান হিসেবে অভিনয় শুরু করেন জেলেনস্কি। রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয় ভাষার একাধিক টিভি শোতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ২০০৮ সালে, তিনি ‘লাভ ইন দ্য বিগ সিটি’ ফিচার ফিল্মে কাজ করার সুযোগ পান। এরপর তিনি এই ছবির সিক্যুয়েল ‘লাভ ইন দ্য বিগ সিটি ২’ তেও কাজ করেন। ছবিটির তৃতীয় অংশ এসেছিল ২০১৪ সালে।

২০১২ সালে, তার চলচ্চিত্র হেভস্কি ভার্সেস নেপোলিয়ন মুক্তি পায়। একই বছরে তার হিট ছবি ৮ ফার্স্ট ডেটসও আসে। এই ছবির সিক্যুয়েল ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে মুক্তি পায়। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ভলোদিমির জেলেনস্কি বোর্ডের সদস্য এবং টিভি চ্যানেল ইন্টারের সাধারণ প্রযোজক ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি ইউক্রেনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রাশিয়ান শিল্পীদের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন।

২০১৫ সালে রাশিয়ান শিল্পীদের ইউক্রেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালে জেলেনস্কির রোমান্টিক কমেডি ছবি লাভ ইন দ্য বিগ সিটি ২ ইউক্রেনে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৫ সালে, ভলোদিমির জেলেনস্কি সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল নামে একটি শোতে কাজ করেছিলেন। মজার বিষয় হল, এই শোতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভলোদিমির।