বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন খান ফারুকের মরদেহ দেশে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তার মরদেহ দেশে পৌঁছায়। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর ফটক দিয়ে ফারুকের মরদেহ বের করা হয়। বিমানবন্দর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন চিত্রনায়ক ফারুক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ফারজানা পাঠান, কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ অসংখ্য ভক্তবৃন্দ রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দর থেকে ফারুকের মরদেহ সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর উত্তরায় তার নিজের বাস ভবনে। সেখান থেকে সব শ্রেণি পেশার মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, সকাল ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত সেখানে রাখা হবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সার্বিক ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে। বাদ জোহর প্রয়াত তারকার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বিএফডিসিতে নিয়ে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এফডিসির শ্রদ্ধা নিবেদন হবে আনুমানিক সাড়ে ৩টায়।
এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে চ্যানেল আই। সেখান থেকে বিকাল ৫ টায় গুলশান আজাদ মসজিদে বাদ আছর জানাজা নামাজ শেষে কালীগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে এবং পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
তার ভগ্নিপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে.বি.এম মফিজুর রহমান খান জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জে বাবা আজগর হোসেন পাঠানের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন চিত্রনায়ক ফারুক।
উল্লেখ্য, অভিনেতা ফারুক দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আট বছর ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এই অভিনয়শিল্পী ও রাজনীতিবিদ। সর্বশেষ ২০২১ সালে মার্চ মাসের প্রথম দিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। পরীক্ষায় তার রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করছিলেন তিনি।
এদিকে, দাপুটে এই অভিনেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি প্রমুখ।
১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। এ নায়কের শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রাখার পর অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।