প্রচ্ছদ ›› বিনোদন

‘মিয়াভাই’র বর্ণাঢ্য জীবন

টিবিপি ডেস্ক
১৫ মে ২০২৩ ১৪:৫২:৩১ | আপডেট: ১১ মাস আগে
‘মিয়াভাই’র বর্ণাঢ্য জীবন
অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক

ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। তবে ঢালিউডে অনেকের কাছে তিনি ‘মিয়াভাই’। চলচ্চিত্রের বাইরেও ফারুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী।

সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ২০২১ সালের ৪ মার্চ থেকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন নায়ক ফারুক।

একনজরে জেনে নিন চিত্রনায়ক ফারুকের বর্ণাঢ্য জীবন-

১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এ চিত্রনায়ক। তবে মানিকগঞ্জে জন্ম হলেও তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়। বাবা আজগার হোসেন পাঠান। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ফারুক সবার ছোট।

ব্যক্তিগত জীবনে ফারুক ফারজানা পাঠানকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন।

এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমার তার অভিষেক হয়। প্রথম সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন চিত্রনায়িকা কবরী।

এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’, এ দুটি সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত সুজন সখী ও লাঠিয়াল দুটি ব্যবসাসফল ও আলোচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ফারুক। সে বছর লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপরে ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত তিনটি ছায়াছবি ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’ ও ‘নয়নমনি’।

পরের বছর শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত কালজয়ী উপন্যাস সারেং বৌ অবলম্বনে নির্মিত ‘সারেং বৌ’ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র দুটি নারীকেন্দ্রিক হলেও তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।

১৯৭৯ সালে তার অভিনীত ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’ চলচ্চিত্রগুলো ব্যবসাসফল হয়।

১৯৮০ সালে ‘সখী তুমি কার’ ছায়াছবিতে শাবানার বিপরীতে শহুরে ধনী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে ‘মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে মিয়া ভাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

স্কুলজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন নায়ক ফারুক। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

মিয়া ভাই সবাইকে কাঁদিয়ে ৭৫ বছর বয়সে আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ও সিঙ্গাপুর সময় সকাল ১০টায় মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।