প্রচ্ছদ ›› ফিচার

রোমানিয়ার মেয়ে মারিয়া ভালোবাসেন বাংলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ আগস্ট ২০২৩ ২০:০৮:১০ | আপডেট: ১ year আগে
রোমানিয়ার মেয়ে মারিয়া ভালোবাসেন বাংলা

জীবনের ঝঁক্কি-ঝামেলা পেছনে ফেলে প্রিয় গন্তব্যের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ার মজাই আলাদা। চলুন আজকে জানা যাক ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি শহরে দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি বসবাস করা বাংলাদেশের মেধাবী যুবক মো. সাইফুল ইসলাম সম্পর্কে। যিনি দেশ বিদেশ ভ্রমণ করে তার জীবনকে আমূল বদলে দিয়েছেন। অবশ্য এর পেছনে চমৎকার একজন ভিনদেশীর কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন সাইফুলের জীবনসঙ্গীনি রোমানিয়ার মেয়ে মারিয়া। বাংলাকে অনেক ভালোবাসেন মারিয়া। ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা করতে গিয়ে মারিয়া আরও বেশি আপন করে নিয়েছেন ভ্রমণপিপাসু কুমিল্লার সাইফুলকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একান্ত সাক্ষাৎকারে রোমান্টিক ওই দাম্পতি বলেন, আমরা অনেকেই ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। ভ্রমণ মানে শুধু সৈকতের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে নিয়ে প্রিয় পানীয়তে চুমুক দেওয়া নয়। নয় অস্ত যাওয়া সূর্যটাকে হা করে গিলে ফেলার ভঙ্গিমাকে ফ্রেমবন্দি করে ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা। ভ্রমণের রয়েছে এমন কিছু উপকারিতা, যা আমাদের জীবনযাপনকে সহজ ও সুন্দর করে। ভ্রমণ একজন মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের আস্থা অর্জনের জন্য প্রেরণা যোগায়। বিশদ অভিজ্ঞতা সুদূরপ্রসারি চিন্তা করতে সাহায্য করে। কর্মজীবনে এর প্রভাব অপরিসীম, কেননা কর্মক্ষেত্রের বিস্তারের জন্য প্রয়োজন বহুজাতি, বহু সংস্কৃতির সংমিশ্রণ।

চমৎকার বাংলা ভাষায় কথা বলা বাংলার বধু মারিয়া বলেন, ভ্রমণের ফলে বিচিত্র পৃথিবীতেও এমন কিছু জায়গার সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলো বিভিন্ন দেশে একই রকম। স্বাভাবিকভাবেই একই রকম পরিবেশ অজানা দেশে পেলেও সেখানে মানিয়ে যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। তাছাড়া একদম নতুন জায়গা খাপ খাইয়ে নিতে ঠিক কতটুকু সময় লাগছে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা হয়ে যায়। ফলে একজন পর্যটক এমন জায়গায় যেতেও পিছপা হন না যে জায়গার ব্যাপারে কোথাও থেকে কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

রোমানিয়ার মারিয়া আরও বলেন, অফিসের চার দেয়ালের পরিবেশ যত সুন্দরই হোক না কেন, তাতে মনোরম লেক আর মাথার ওপর আকাশ না থাকলে কোনো লাভ নেই। অনেকে কাজের পরিবেশ ভালো করার জন্য ডেস্কে বা অফিসের দেয়ালে প্রেরণামূলক পোস্টার লাগান। কেউ কেউ ইউটিউবে প্রেরণামূলক ভিডিও দেখেন। কিন্তু এক সময় এসব কিছুই যেয়ে মিশবে বিরক্তিতে। কারণ এগুলো পুনরাবৃত্তিমুলক ক্রিয়াকলাপ। যে ব্যক্তি পৃথিবীর যত বেশি মাইল পথ অতিক্রম করেছে, সেই সংখ্যার থেকেও তার বন্ধু সংখ্যা বেশি। এটি জটিল কোনো অঙ্ক নয়; বরং সেই বন্ধুরা শুধু চেনামুখের থাকে না, বিভিন্ন বিপদে-আপদে তাদের সাহায্যও পাওয়া যায়। বছরে যিনি দু’একবার ভ্রমণের জন্য ঘুরতে বের হন এমন মানুষের থেকে যিনি ঘন ঘন ঘুরে বেড়ান এমন মানুষের কথায় যে কেউ সহজেই বুঁদ হয়ে যান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মারিয়ার জীবনকাহিনী কুমিল্লার ভাষায় ভিডিও প্রতিদিন দেখছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। সাইফুলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজলার খয়রাবাদ গ্রামে এবং তারা দেবিদ্বার পৌরসভার গোমতি আবাসিক এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ।

২০২১ সালে সাইফুল শখের বশেই সাইফুল ওয়ার্ল্ড নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ খোলেন। মারিয়ার কুমিল্লার ভাষায় কথা বলা ও বাংলা সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার ফলে অল্পদিনেই তাদের ইউটিউব চ্যানেলটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম পাঁচ মাসেই পেয়ে যান ৫০ হাজার সাবস্ক্রাইবার ও এই পর্যন্ত সাবস্ক্রাইবার ৮০ হাজার এবং পাশাপাশি ফেসবুক পেজেও ফলোয়ারের সংখ্যা এক লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি। শুধু ইউটিউবে তাদের ভিডিও এখনো পর্যন্ত দেখা হয়েছে পাঁচ কোটি বার। ফেসবুকে তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও ৬০ লাখের উপরে এবং প্রতিটি ভিডিও দেখা হয়েছে গড়ে ৫ থেকে ১০ লাখ বার।

কথা বলে আরও জানা যায়, এ দম্পতির পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয় ২০০৫ সাল থেকে। রোমানিয়ার বিখ্যাত শহর তিমিসোয়ারার ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অফ তিমিসোয়ারা। সাইফুল এবং মারিয়া একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তাদের প্রেম হয় এবং ৬ মাসের মাথায় তারা বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর মারিয়ার বাবার ভয়ে তারা চলে যান গ্রিসে এবং গ্রিস থেকে পরে তারা সেটেল হন ফিনল্যান্ডে। তাদের ১০ বছরের ছেলে ও মারিয়া দুইজনেই পবিত্র কুরআন তেলওয়াত থেকে শুরু করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন প্রতিনিয়ত। চলতি বছরের ৬ মার্চ বাংলার বধু মারিয়া আরও দুটি জমজ সন্তানের জন্ম দেন।

সাইফুল মুঠোফোনে জানান, তারা প্রতি বছর সাদিদ এবং মারিয়াকে নিয়ে দেশে বেড়াতে আসতেন। বাংলাদেশে শ্বশুর বাড়ির টানে কুমিল্লার ।অনেক অসহায় দরিদ্রকে নিজ হাতে সাহায্য সহযোগিতা করেন রোমানিয়ার মারিয়া।

এছাড়া সাইফুল ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বর্তমানে তার দুটি অভিজাত রেস্তোরা রয়েছে। এর আগে ফিনল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে আরও ৮টি রেস্তোরা ছিলো। করোনাভাইরাসের সময় বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সেগুলো গুটিয়ে নেন সাইফুল ও রোমানিয়া।

সাইফুল রোমানিয়াতে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা এবং রোমানিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন।