সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনের সময় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেন্টু পুরকায়স্থকে পাননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সঠিক সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এমনকি আরও যারা সঠিক সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না তাদের বিষয়েও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারমিন ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন ইতোমধ্যেই জারি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুধবার দুই দিনের সফরে সিলেট পৌঁছান। আজ সকালে তিনি সিলেটের জৈন্তাপুর ও বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউজে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অভিযানকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার, পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড রুম, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে উপস্থিত ইনডোর ও আউটডোর রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেন। পরিদর্শনকালে জৈন্তাপুর কমপ্লেক্সে বেশকিছু অনিয়ম দেখতে পান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখানে কমপ্লেক্স চত্বরে সহজে দৃষ্টিযোগ্য স্থানে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারের স্থান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এর কারণ ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভিতরে দৃষ্টিযোগ্য স্থানে চিকিৎসকদের স্থান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন কীভাবে থাকতে পারে। প্রাইভেট ক্লিনিক ও চেম্বারের সঙ্গে এই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কারও স্বার্থ না থাকলে এটি হতে পারত না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেখানে হাত পরিষ্কার করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার চাইলে উপস্থিত কর্মকর্তারা সেটি দিতে ব্যর্থ হয়। পরে তাদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে অথচ সেখানে কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয় না। এটি কীভাবে হতে পারে? একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ঐ উপজেলার মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দেবার জন্য। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা যারা দিবেন তারা যদি দায়িত্বশীল না থাকেন তাহলে তো সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে না। সরকার যে জন্য বিনামূল্যে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে চাচ্ছে সেটিও পূরণ হবে না। আমি পরিষ্কার ভাষায় এখানে বলে যাচ্ছি, আমি শুধু বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ত্রুটিই দেখব না। সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা হলে সংশ্লিষ্ট কেউই মাফ পাবে না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ইমার্জেন্সি রুম অত্যন্ত ছোট দেখেতে পেয়ে কক্ষটিকে বড় করার নির্দেশনা দেন। অপারেশন থিয়েটার থাকার পরও সেগুলোতে কোনো রোগীর অপারেশন হতে না পারার জন্য মন্ত্রী উপস্থিত কর্মকর্তাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন। অন্যান্য কক্ষ পরিদর্শন করে সেগুলো আরও মেরামত করার নির্দেশ দেন এবং এখানকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবলের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ সময় কিছুদিন আগে জৈয়ন্তপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষও পরিদর্শন করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে এখানকার কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মীদের একত্র করে প্রয়োজনীয় কিছু দিক নির্দেশনা দেন এবং চিকিৎসা সেবা দিতে সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোন মিডিয়ায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে নেতিবাচক খবর দেখতে চাই না। স্বাস্থ্যকেন্দ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য। কাজেই মানুষ যেনো সঠিক সেবা পায়, রোগীরা যেন অসম্মানিত না হয় সেটি সবার আগে সবাইকেই খেয়াল করতে হবে।’
অভিযানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, বিএমএ মহাসচিব এহতেশামুল হক চৌধুরী, সিলেটের সিভিল সার্জনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।