প্রচ্ছদ ›› স্বাস্থ্য

টাঙ্গাইলে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ, হাসপাতালে রোগীর চাপ

অরণ্য ইমতিয়াজ
২০ নভেম্বর ২০২২ ১৬:০৯:১২ | আপডেট: ২ years আগে
টাঙ্গাইলে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ, হাসপাতালে রোগীর চাপ

টাঙ্গাইলে ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। সেই সাথে বাড়ছে সর্দি, কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগ। এসব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বেড না পেয়ে অনেককে থাকতে হচ্ছে মেঝেতে-বারান্দায়। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের কষ্ট আরো বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের শুরু থেকেই হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে। অতিরিক্ত রোগীর কারণে পর্যাপ্ত বেড দেয়া যাচ্ছে না রোগীদের। ফলে অনেকে বাধ্য হয়েই হাসপাতালের মেঝেতে ও বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ভর্তি থাকছে বাড়তি রোগী।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। রোববার ৪৩ সিটের বিপরীতে ভর্তি হয় ১১২ জন। আর শনিবার ১১৬ জন এবং শুক্রবার ভর্তি হয়েছিলো ১১৭ জন।

আক্রান্ত রোগীর স্বজনরা বলেন, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়ার পরেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। এতে আমাদের নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হলেও কিছু করার উপায় নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরজানা গ্রামের গৃহবধূ সাবিহা তার শিশুকন্যাকে নিয়ে তিনদিন আগে হাসপাতালে আসেন। ওয়ার্ডে খালি বেড না থাকায় তারা বারান্দার মেঝেতে বিছানা নিয়ে থাকতে শুরু করেন। শিশুর অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাকে এনআইসিইউতে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, কয়েকদিন আগে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয় তার মেয়ে। এলাকার ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। অবস্থার অবনতি হলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, বেড পাইনি। কি করবো মেঝেতেই থাকছি। কষ্ট হচ্ছে, তবু কিছু করার নেই। অনেক রোগীই এভাবে মেঝেতে থাকছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. নুরুল ইসলাম শামীম বলেন, “অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। এ সময় ঠাণ্ডাজনিত নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। এর প্রভাবে গত এক সপ্তাহ ধরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। একটু বাড়তি যত্ম শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে দুরে রাখতে পারে। আর নবজাতকদের ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে ঠাণ্ডাজনিত রোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।”

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. লুৎফর রহমান বলেন, “গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে ৮ শতাধিক ঠাণ্ডাজনিত রোগী ভর্তি হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।”

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদেকুর রহমান বলেন, “প্রায় প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। এতে রোগীদের বেশ সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণেই এমনটা হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব তাদের সেবা দিতে।”