গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা। গ্রীষ্ম শুরুর পর থেকে প্রতিটি দিন পূর্বাপেক্ষা বেশি দাবদাহ নিয়ে হাজির হয়। জুলাইয়ের শুরুতে তা নিতান্ত প্রকট আকার ধারণ করে। এমনকি এই মাত্রা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।
হিট স্ট্রোক কী?
মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রির বেশি হয়ে গেলে মানুষের রক্তচাপ কমে যায়, এমনকি অচেতনও হয়ে পড়তে পারে। এ সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘হিট স্ট্রোক’ বলে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তাই চলুন জেনে নেই প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক এড়িয়ে চলার উপায়ঃ
সঠিকভাবে হাইড্রেটেড থাকা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যাদের খুব বেশি ঘরের বাইরে থাকার প্রয়োজন হয়, তাদের শরীরকে ভালভাবে হাইড্রেটেড করে বাইরে বের হওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। এখানে নিছক এক গ্লাস পানি পান যথেষ্ট নয়। তাই বেশি বেশি করে পানি পান করতে হবে। চাইলে সঙ্গে পানির বোতল রাখতে পারেন।
সুস্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার জন্য মৌসুম অনুযায়ী পোশাক পরিধানটা খুবই দরকারি। আঁটসাঁট, রঙিন এবং একাধিক স্তরের মোট পোশাক শরীর থেকে ঘামকে বাষ্পীভূত করা কঠিন করে তুলতে পারে। ফলে শরীরের অতিরিক্ত তাপ মুক্তি বাধাগ্রস্ত হয়। তাই প্রচন্ড গরম আবহাওয়াতে সাদা, অথবা যে কোনো হাল্কা রঙের এবং সুতি ফেব্রিকের কাপড় পড়া উচিত। এতে শরীরের অতিরিক্ত তাপ বের করে দিতে সুবিধা হয়। এছাড়াও শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলোকে সূর্য থেকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর ঘাম-প্রতিরোধী সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ক. যে কোন খাবার গ্রহণের সময় শরীরের তাপ তৈরি হয়। খাবারে পরিমাণের সাথে সমানুপাতিক হারে শরীরে তাপের যোগান হতে থাকে। তাই দুপুর এমনকি রাতের খাবারও যারা ভরপেট খান তাদেরকে সাবধান হতে হবে। ছায়ায় বা ফ্যানের নিচে বসে খাওয়া-দাওয়া করলেও এর ব্যতিক্রম হয় না। এই তাপ বৃদ্ধিটা ভেতর থেকে শরীরকে জ্বালিয়ে দিতে থাকে। তাই কোন এক বেলা একদম ভরপেট খাবার না খেয়ে অল্প করে কয়েক ঘন্টা পর পর খাবার খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকবে।
খ. ফলের সালাদ খেতে পারেন- শরীরে খাবারের চাহিদা, মুখে স্বাদের ভিন্নতা এবং শরীরকে পুনরায় হাইড্রেটিং-এর জন্য সেরা খাবার হচ্ছে ফলের সালাদ। বিভিন্ন রসাল ফলের ককটেল দারুণ একটি খাবার হতে পারে ব্রেকফাস্ট অথবা সন্ধ্যার স্ন্যাকসে।
গ. তরমুজে পানির পরিমাণ শতকরা ৯০ ভাগ, কমলায় ৮৭ ভাগ, আর শসাতে ৯৫ ভাগ।
ঘ. এক কাপ শসার টুকরোতে মাত্র ১৬ ক্যালোরি থাকে, যা ভারী খাবারের ঝামেলা থেকে অনেক অনেক দূরে।
ঙ. আপেল গরমের মাসগুলোতে দেহকে সতেজ রাখার উপযুক্ত ফল।
চ. টমেটো শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। টমেটোতে থাকা লাইকোপিন মুলত একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ছ. পাতাযুক্ত সবুজ শাক- পালং শাকের মত এক গাঢ় সবুজ শাকেই পানি আছে শতকরা ৯২ ভাগ। এটি যা ঘামের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যাওয়া ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মত খনিজের ঘাটতি পূরন করে।
জ. পুদিনা প্রাণবন্ত ভেষজগুলোর মধ্যে একটি। তাজা পুদিনা কয়েক শতাব্দী ধরে গরম আবহাওয়ায় মানুষকে শীতল করতে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। কখনো চা-এ বা ঠান্ডা পানীয়তে কখনো বা সালাদে অভিজাত উপস্থিতি পাওয়া যায় এই পাতাটির।
ঝ. ডাবের পানি- ডাবের পানি ইলেক্ট্রোলাইট দিয়ে ভরা থাকে যা শরীরকে হাইড্রেটেড এবং ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এই পাওয়ার পানীয়টি তাপকে পরাস্ত করে সারাদিন ধরে শরীরকে সক্রিয় রাখে। এটি হজম ক্ষমতা বাড়াতেও কাজে লাগে।
ঞ. দই- দই গরমের সময় জনপ্রিয় কারণ এতে জলের পরিমাণ বেশি এবং শীতল প্রভাব রয়েছে। দই অন্ত্রের উপকারি ব্যাকটেরিয়ার অনূকুলে থাকে, যা শরীরকে খাদ্যের বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই মিষ্টান্নটি প্রচন্ড উষ্ণতায় ঠান্ডা পানীয়ের বিকল্প হিসেবে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।