প্রচ্ছদ ›› লাইফস্টাইল

গরমে এসি ছাড়াই ঘর ঠাণ্ডা রাখার সহজ পদ্ধতি

টিবিপি ডেস্ক
১৮ মে ২০২২ ২০:৩৮:২৯ | আপডেট: ১ year আগে
গরমে এসি ছাড়াই ঘর ঠাণ্ডা রাখার সহজ পদ্ধতি
সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী উষ্ণতায়নের নিরন্তর প্রভাব বিস্তারে বিলাসবহুল এসি বা এয়ার কন্ডিশনার পরিণত হয়েছে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যে। ফ্যানের নিচে থেকেও ঘর্মাক্ত কলেবর অবস্থাটা এখন নিত্যদিনের প্রতিচ্ছবি। লোডশেডিংয়ের শহরে এসির শতভাগ সুবিধা পাওয়া নিয়ে মুশকিলে পড়তে হয়। এছাড়া মাস শেষে মোটা অঙ্কের বিদ্যুৎ বিলের চাপ তো আছেই। এরপরে কয়েক মাস পর পর মেরামতের হয়রানি। একদিকে প্রচন্ড গরমে ডিহাইড্রেশন সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়, আরেক দিকে কৃত্রিম ঠান্ডা বাতাসের সাথে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে নানা শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি। সর্বোপরি স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকিটা থেকেই যাচ্ছে।

এ অবস্থায় চলুন জেনে নেয়া যাক- এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই কিভাবে ঘরকে ঠান্ডা রাখবেন। গ্রীষ্ম ঋতুতে ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে এয়ার কন্ডিশনার-এর বিকল্প উপায়সমূহ জেনে নেয়া যাক-

ঘরের ভেতর গাছ রাখা

ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই কাজটি অনেকেই করে থাকেন। অনেকেরই বারান্দায় ছোট বাগান করার শখ থাকে। ঘরের ভেতর জানালার কাছে বা বারান্দায় এভাবে গাছ রাখা হলে তা বাইরের গরম তাপ শুষে নেয়। তাছাড়া গাছগুলো সারা ঘরের শোভাবর্ধনও করে। এগুলোর মধ্যে মানিপ্লান্ট, স্নেক প্লান্ট, অ্যালো ভেরা, এবং অ্যারিকা পাম বেশ জনপ্রিয়। তবে কারো উদ্ভিদে অ্যালার্জি থাকলে সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আগে থেকেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেয়া উত্তম।

তাছাড়া গাছ শুধু রাখলেই হবে না, এর যথাযথ পরিচর্যাও করতে হবে। ঘরের ভেতর রাখা এই গাছগুলো সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য ঘরের গরম বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়। এতে বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে ঘরে ঠান্ডা ভাব বজায় থাকে। সম্ভব হলে বাড়ির বাইরের দিকেও গাছ লাগানো উচিত। এতে করে বাইরের যত গরম তাপ বাড়ির দেয়ালের বাইরে অংশেই রয়ে যায়। অন্যদিকে ঘরের ভেতরটা শীতল থাকে।

দিনের বেলায় জানালা বন্ধ রেখে পর্দা টেনে দেয়া

বেলা বাড়ার সাথে সাথে সকালের মিঠে রোদ পরিণত হয় চামড়া পোড়ানো রোদে। তাই বেলা ১১টা মানেই এবার জানালার বন্ধ করে টেনে দিতে হবে পর্দা। এতে করে ঘরের মধ্যে সরাসরি সূর্যালোকের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হবে। সেই সাথে ফ্যান চলতে থাকলে দিনের অস্বস্তিকর গরম কিছুটা হলেও কমে যাবে।

দুপুরের কাঠ ফাটা রোদ পড়ে যাবার পর পরই বিকেলের দিকে জানালা খুলে দেয়া যেতে পারে। এতে ঘরের গুমোট বাতাস বাইরে বেরিয়ে যায়, আর বাইরের তুলনামূলক কম গরম বাতাস ভেতরে ঢোকে। পর্দা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মোটা পর্দা খুব কার্যকরী হয়। গাঢ় রঙের মোটা সুতি কাপড়ের পর্দা ঘরের ভেতর রোদ প্রবেশে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

হালকা রঙের পর্দা, বালিশের কভার ও বিছানার চাদর ব্যবহার করা

গরমকাল আসার সাথে সাথেই ঘরের সাটিন ও পলিস্টারের বিছানার চাদর বদলে ফেলা উচিত। এর জায়গায় ব্যবহার করতে হবে সুতি বা লিনেনের কাপড়। এগুলো অবশ্যই হালকা রঙের হতে হবে। হালকা রঙের কাপড় তাপ প্রতিফলন করার মাধ্যমে ঘরের তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে সাহায্য করে। পর্দা, বালিশের কভার ও বিছানার চাদর বেশি ময়লা হওয়ার আগেই ধুয়ে ফেলতে হবে। গরমের দিনে এগুলো খুব তাড়াতাড়ি নোংরা হয়ে যায়। বিশেষ করে বিছানার চাদর খুব পাতলা হলেও শরীরের ঘামে দ্রুত অপরিষ্কার হয়ে যায়।

এলইডি বাল্ব ব্যবহার করা

এখন ইলেক্ট্রনিক্সের বাজারগুলোতে হলুদ বাল্বের জায়গা দখল করছে সাদা আলোর ফ্লুরোসেন্ট বা এলইডি বাল্ব ও টিউব। দাম বেশি হলেও এগুলো বেশ ইকো ফ্রেন্ডলি। এলইডি বাল্বগুলো সবচেয়ে কম তাপ উৎপন্ন করে এবং এগুলোতে বিদ্যুৎ খরচও কম হয়। উষ্ণতার সময় সবচেয়ে ভালো যতটুকু সম্ভব কম আলো ব্যবহার করা। খুব প্রয়োজন না হলে ঘরের বাতি নিভিয়ে রাখাই উত্তম। অন্ধকার ঘর তাপ ছড়ায় না এবং বেশি সময় ধরে ঘরে ঠান্ডা ভাব বজায় রাখে। যেসব অঞ্চলে এখনো হলুদ বাল্বের ব্যবহার আছে, সেখানে শীঘ্রই বাল্বগুলো এলইডি বাল্ব দ্বারা বদলে ফেলতে হবে। এলইডি বাল্বগুলো টিউব লাইট থেকেও ঘরকে শীতল রাখতে বেশি কার্যকর।

জানালা বা বারান্দায় বাশের পর্দা লাগানো

বাইরের খর তাপ থেকে ঘরকে বাঁচানোর জন্য এই পুরনো পদ্ধতিটি বেশ ফলপ্রসূ। এখনো কিছু কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাশের পর্দা বানিয়ে মহিলারা জীবিকা নির্বাহ করেন। এই পর্দাগুলো মাঝ দুপুরেও ঘরকে অনেক ঠান্ডা রাখে। তাছাড়া এগুলো পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে সহজে পরিষ্কারও করা যায়। হাল্কা ভেজা এই পর্দাগুলো শুকানোর জন্য টানানো থাকলেও দারুণ ভাবে তাপ নিরোধকের কাজ করে।

এক্সস্ট ফ্যান ঘরের ভেতরের গরম হাওয়া বাইরে বের করে দেয়। তাই দুপুরে রান্নার সময় ঘরের গরম ভাব কাটাতে এক্সস্ট ফ্যান চালিয়ে রাখা যায়। সম্ভব হলে দুপুর ১২টায় তাপ চড়ার আগেই রান্নার কাজ সেরে ফেলা ভালো। বেলা ১১টার পর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত যথাসম্ভব কম গ্যাস পোড়ানো উচিত।

ভেজা কাপড় দিয়ে ঘরের মেঝে মুছা

মাঝ দুপুরে তাপ অনেকটা চড়ে গেলে ভেজা কাপড় দিয়ে সারা ঘরের মেঝে মুছে ফেলতে হবে। অতঃপর ফ্যান ছেড়ে দিলে ঘরের উষ্ণতা অনেকটা কমে যাবে। অবশ্য এতে ঘরের মধ্যে ভেজা-স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের সৃষ্টি হবে। কিন্তু ফ্যানের বাতাসে তা কিছু সময় পরেই ঠিক হয়ে যাবে। ঘর মুছার পূর্বে অবশ্যই জানালা লাগিয়ে পর্দা টেনে দিতে হবে। ঘরের মুছার জন্য বালতিতে পানি নেয়ার সময় পানিতে অল্প পরিমাণ লবণ গুলিয়ে নেয়া ভালো। লবণ-পানি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

রাতে ঘুমাতে যাবার আগেও এটা করা যেতে পারে। অতঃপর উচু বিছানায় না শুয়ে মেঝেতে বিছানা করে বা ম্যাট্রেস পেতে ঘুমানো যেতে পারে। মেঝের কাছাকাছি বায়ুমণ্ডল স্বাভাবিকভাবে অপেক্ষাকৃত কম গরম থাকে। কারণটা হলো- ঠান্ডা বাতাস ভারী আর গরম বাতাস হয় হালকা। প্রচন্ড গরমের সময় রাতে লোডশেডিং হলে অনেককেই বিছানা ছাড়াই মেঝেতে শুয়ে পড়তে দেখা যায়।

ঘর গুছিয়ে রাখা

শীত-গ্রীষ্ম কোন ঋতুতেই ঘর গুছানোর কোন বিকল্প নেই। তবে গরমের দিনগুলোতে অপরিচ্ছন্নতা ঘরের উষ্ণতা আরো বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে ঘরময় কাগজপত্র স্তূপ করে রাখা, বিছানার উপর কাপড়-চোপড়, চাদর, বালিশ অগোছালো করে রাখা ঘরে গুমোট পরিবেশ সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়; এ অবস্থায় মাঝ দুপুরে বদ্ধ জানালার ভেতরে এই গুমোট পরিবেশে বাজে গন্ধও ছড়াবে।

ঘরে উন্মুক্ত অবস্থায় সিল্কের জিনিসপত্র থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। মেঝেতে কার্পেট বিছানো থাকলে তা তুলে ফেলে তার নিচের মেঝে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। পরিষ্কার করার সময় জানালা খোলা রাখতে হবে যেন ঘরের ধূলাবালি বাইরে বেরিয়ে যায়। তারপর জানালা লাগিয়ে ফ্যান ছেড়ে দিতে হবে।

টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে এক বালতি বরফ রাখা

গ্রামে-গঞ্জে আগে ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখতে বড় বড় মাটির হাড়িতে পানি ভরে ঘরের ভেতর রেখে দেয়া হতো। এই পদ্ধতিরই আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে এই ফ্যান ও বরফ দিয়ে ঘরের গরম ভাব দূর করা। এক বালতি বরফ টুকরো টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে রেখে দিলে ধীরে ধীরে ঠান্ডা বাতাস ঘরময় ছড়াতে শুরু করে। সিলিং ফ্যানের নিচে মেঝেতে বালতি রেখেও এটা করা যায়। এসির মতই এক্ষেত্রেও ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখা যাবে না। বাইরে থেকে এসে এক বালতি বরফের পেছনে ফ্যান চালিয়ে দিয়ে তার সামনে বসে থাকলে প্রচন্ড গরমের ক্লান্তি ভাবটা দূর করা যেতে পারে। এটা রীতিমত তাৎক্ষণিকভাবে সারা দেহে এক আরামদায়ক শীতল অনুভূতি সঞ্চার করবে।

গরম আসার আগেই ভেন্টিলেটর পরিষ্কার করা

এখনকার অ্যাপার্টমেন্টগুলো থেকে ধীরে ধীরে ভেন্টিলেটর সিস্টেম উঠে যাচ্ছে। ভেন্টিলেটর ঘরকে ঠান্ডা রাখতে কাজে লাগে। যাদের বাসায় ভেন্টিলেটর আছে, তাদের অবশ্যই গরমকাল আসার আগে তা ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। এতে ঘরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বাতাস চলাচল করতে পারবে।