প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

অনলাইন বিবাহ প্ল্যাটফর্মে ঝুঁকছেন ৩০ বছর বয়সী পুরুষরা

মুহাম্মদ আইয়ুব আলী
১১ মে ২০২২ ১৬:২৪:২৩ | আপডেট: ১ year আগে
অনলাইন বিবাহ প্ল্যাটফর্মে ঝুঁকছেন ৩০ বছর বয়সী পুরুষরা

তরুণ ব্যবসায়ী মো. ওহিদুজ্জামান আদিব। বাড়ি গাজীপুর জেলায়। সম্প্রতি একটি অনলাইন বৈবাহিক সার্ভিসের মাধ্যমে গাঁটছড়া বাঁধেন। প্রথমে বন্ধুদের পরামর্শে তিনি বিডিম্যারিজ ডট কম ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করেন।

নিবন্ধিত হবার পর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে একে একে চারজন পাত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে সায়মা ইসলাম মুনিয়াকে ভালো লাগে ওহিদুজ্জামানের।

এরপর তার পরিবারের লোকজন লক্ষ্মীপুরে মুনিয়ার বাড়িতে যান। দুই পরিবারের আলাপের পর তাদের বিয়ে হয়। বর্তমানে তারা রাজধানীর মগবাজারে বসবাস করছেন।

ওহিদুজ্জামান আদিবের মত এমন অনেকেই তাদের জীবন সঙ্গী বেছে নিতে এখন অনলাইন বৈবাহিক ওয়েবসাইট বেছে নিচ্ছেন। এছাড়া অনেক বাবা-মাও তাদের সন্তানদের বিয়ে করানোর জন্য এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম পছন্দ করছেন।

বর্তমানে কিছু জনপ্রিয় অনলাইন বৈবাহিক সার্ভিসের সাইট বা অ্যাপ রয়েছে। সেগুলো হলো বিবাহবিডি ডট কম, বিডিম্যারেজ ডট কম, বিয়েটা ডট কম, সেনসিবলম্যাচ ডট কম, বরবধু ডট কম, শাদী ডট কম, বাংলাদেশিম্যাট্রিমোনি ডট কম, তাসলিমা ম্যারিজ মিডিয়া ডট কম, দেশিম্যাচমেকিং ডট কম, ম্যারিজম্যাচ ডট কম, বাঁধনম্যাট্রিমোনি ডট কম, ম্যারিজসলিউশনবিডি ডট কম, ব্রিজগ্রুমবিডি ডট কম, কাবিনবিডি ডট কম।

এ সমস্ত পরিষেবার সত্ত্বাধিকারীরা জানান; সেবা ব্যবহারকারীদের ৪৫ দিনের জন্য ৩ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। এছাড়াও বিভিন্ন চার্জের এক মাস থেকে এক বছরের মধ্যে আরও অনেক প্যাকেজ রয়েছে।

বিডিম্যারিজ ডট কম এর সিইও রেজুয়ানুল ইসলাম বলেন, বিডিম্যারিজ ২০২২ সালের মার্চ মাসে শুরু হয়েছে। তবে আমাদের কার্যক্রম আরও আগ থেকে চলছে। এখন প্রায় ৩০ হাজার লোক আমাদের সাইটে নিবন্ধিত আছে। আমরা অবিবাহিতদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।

তাসলিমাম্যারিজমিডিয়া এর সিইও তাসলিমা আক্তার বলেন, সম্ভাব্য পাত্র-পাত্রীদের প্রতিক্রিয়া এখন আগের চেয়ে ভালো। আমাদের এখন ৩১ জন কর্মচারী রয়েছে। মাসিক টার্নওভার প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। এই সাইটের অপারেশনাল খরচ প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা বলেও জানান তিনি।

বরবধূ ডট কম এর সত্ত্বাধিকারী মনজুরুল করিম বলেন, এই সাইটে শুরু দিকে নিবন্ধন করার সময় বায়োডাটা আপলোড করতে লোকজনকে টাকা দিতে হতো। কিন্তু এখন মানুষ স্বেচ্ছায় তাদের বায়োডাটা আপলোড করছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ১০০ জন নিবন্ধন করছে। মাসিক টার্নওভার প্রায় ৩ লাখ টাকা বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন এখানে ৩০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষেরা নিবন্ধনে বেশি আগ্রহী এবং তাদের বেশিরভাগই ৩০ এর কম বয়সী সঙ্গী খোঁজেন।

বিবাহবিডি এর মালিক মো. গোলাম মনোয়ার বলেন, এখন মানুষ অনলাইন বৈবাহিক সাইটের মাধ্যমে তাদের জীবনসঙ্গী খোঁজেন। কারণ সবাই গোপনীয়তা পছন্দ করেন। এই সাইটগুলোতে একজন ব্যক্তি কয়জনের সাথে যোগাযোগ করলো তা কেউ জানতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমার এখানে ২২ কাজ করেন। এই সাইটের মাসে অপরেশনাল খরচ ৭ লাখ টাকা।

তবে আক্ষেপ করে মনোয়ার বলেন, অনলাইন বৈবাহিক প্ল্যাটফর্মের চাহিদা দেখে কিছু অসাধু ব্যক্তি বিবাহের নামে সাইট খুলে মানুষকে হয়রানি করছে।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো সাইটে নিবন্ধন করার আগে, একজন ব্যক্তিকে সাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং তাদের গ্রাহকদের সন্তুষ্টি যাচাই করে দেখতে হবে। এছাড়া পরিষেবা দেয়ার প্রক্রিয়াটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা উচিত।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, সমাজের অধিকাংশ মানুষ বিয়ের জন্য ঐতিহ্যবাহী ম্যাচমেকারদের উপর নির্ভর করে। কিন্তু সেখানে কোনো গোপনীয়তা নেই। "গোপনীয়তার বিষয়টির কারণে অনলাইন বৈবাহিক সাইটগুলির জনপ্রিয়তা বাড়ছে"।

রাজধানীর একজন বিখ্যাত ম্যাচমেকার, ঘটক পাখি ভাই দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, আমার ক্লায়েন্টের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে তবে এটা সত্য যে কিছু লোক এখন অনলাইন বৈবাহিক সাইট পছন্দ করছে।

যাত্রাবাড়ী এলাকার আরেক ম্যাচমেকার মোঃ রাজা মিয়া বলেন, তিনি এখন ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জারের মতো যোগাযোগ অ্যাপ ব্যবহার করেন, যাতে তারা সম্ভাব্য পাত্র-পাত্রীদের আরও ভালো সেবা দিতে পারেন।

মোহাম্মদপুরের ম্যাচমেকার মোঃ মামুন জানান, গত তিন বছর ধরে তার ক্লায়েন্টের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।