প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

আসন্ন বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দারিদ্র্য বিমোচনে

মিরাজ শামস
০৭ মে ২০২৩ ১৫:২০:১৭ | আপডেট: ২ years আগে
আসন্ন বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দারিদ্র্য বিমোচনে
ছবি - শামছুল হক রিপন

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান তৈরীর পাশাপাশি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে সরকার। এবার এ বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। এটি চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। যা পহেলা জুনে সংসদে উন্মোচিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বাজেট সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেই সাথে রপ্তানি বাড়াতে শিল্পায়নের কাঠামোগত রূপান্তর, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষির মৌলিক রূপান্তর এবং সামাজিক উন্নয়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করাই এ বাজেটের মূল লক্ষ্য। তবে করোনা মহামারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বিবেচনা করে আগামী বাজেটের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো ও খাতভিত্তিক কৌশল নির্ধারণ করবে সরকার। সেই সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।

এছাড়াও অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে থাকা অঞ্চল ও জনগণের জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আগামী বাজেটে লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিকে প্রাথমিক শিল্প ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে এ খাতের মৌলিক পরিবর্তন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দিকে নজর দেবে সরকার। যাতে এর মাধ্যমে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

দ্রুত ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য দক্ষ জ্বালানি ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের দিকেও জোর দেয়া হবে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে নানান উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০-এর অধীনে চলমান প্রকল্পগুলোর দ্বিতীয় ধাপের কাজ জুলাই থেকে শুরু হবে।

এছাড়াও, ভিশন ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩১ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্যের অবসান এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হবে। সেই সাথে রপ্তানিমুখী উৎপাদনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিল্পায়নের কাঠামোগত রূপান্তরের উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৮৪ হাজার কোটি টাকা এবং এক লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর আকার ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এবার এডিপি’র আকার বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের মার্চ মাসে দুই লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা আর বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, সুদ ও ভর্তুকি বৃদ্ধির কারণে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। যদিও চলতি বাজেটের তুলনায় এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে মাত্র ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।

নতুন এডিপি প্রস্তাব আগামী ১১ মে এনইসি সভায় অনুমোদনের জন্য রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাবে আশা করা হচ্ছে। এরপর থেকে সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বড় অঙ্কের বরাদ্দ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে চলতি বছরও প্রস্তাবিত এডিপিতে মেগা প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু প্রকল্পে বড় ধরনের বরাদ্দ রয়েছে।