প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

একদশকে বাংলাদেশে আঘাত হানা যত ঘূর্ণিঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ মে ২০২৩ ০৯:৫৯:১২ | আপডেট: ২ years আগে
একদশকে বাংলাদেশে আঘাত হানা যত ঘূর্ণিঝড়
প্রতীকী ছবি

গত একদশকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে একাধিক ঘূর্ণিঝড়। এসব ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে প্রাণহানির সম্মুখীন হতে হয়েছে। 

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন

ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ২০১৩ সালের ১৬ মে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে৷ এর বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার৷ এই ঝড় বাংলাদেশে ১৭ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়৷

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ২০১৬ সালে ২১ মে বাংলাদেশের উপকূল এবং ভারতে অল্প কিছু অঞ্চলে আঘাত হানে৷ ধারণা করা হয়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ব্যাপ্তি ছিল দুটি বাংলাদেশের সমান আকৃতির৷ রোয়ানু’র আঘাতে চট্টগ্রামে ২৬ জনের মৃত্যু হয়৷

ঘূর্ণিঝড় মোরা

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা ২০১৭ সালের ৩০ মে ১৪৬ কিলোমিটার বাতাসের গতিতে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে৷ ঝড়ের তাণ্ডবে হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়৷ কক্সবাজারে বিদ্যুৎব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে৷ জমির ফসল এবং লবণচাষিদের জমানো লবণ নষ্ট হয়ে যায়৷ দুই নারীসহ তিনজন মারা যায়৷

ঘূর্ণিঝড় ফণী

২০১৯ সালের ৩ মে বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাংলাদেশে নয়জনের মৃত্যু হয় ৷ তবে প্রাণহানি কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি ৷

সেই সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় ফণীতে ৬৩ হাজার ৬৩ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ১ হাজার ৮০৪ হেক্টর। ওই ঝড়ে ২ হাজার ৩৬৩টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৮ হাজার ৬৭০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার। এছাড়া ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। ফণীর প্রভাবে ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে এবং বরগুনায় দুজনসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল

বারবার দিক বদল করে ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ উপকূলে আঘাত হানার পর স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে আসায় ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে কম হয়৷ আক্রান্ত হয় বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর ২০ লাখ মানুষ। এই ঝড়ে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১৭ জন। ফসলের ক্ষেত আক্রান্ত হয় প্রায় ২ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর। এর মধ্য দুই থেকে পাঁচ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়। মাছ নষ্ট হয় প্রায় ৪৭ কোটি টাকার।

‘বুলবুলে’ ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর অন্যতম ছিল সাতক্ষীরা। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায় প্রায় ১৭ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং ৩৫ হাজার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় ৫ হাজার ১৪টি চিংড়ি ঘের৷

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান

করোনাভাইরাসের সংকটকালে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। উত্তর থেকে দক্ষিণ— পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই ঘূর্ণিঝড়ে। ২০২০ সালের মে মাসের এই ঝড় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রায় ২৮ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। এতে দেশের ছয় জেলায় ২১ জন মারা যায়।

ঝড়ের পর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দেয়া ক্ষতির হিসাব অনুসারে, ২৬টি জেলার মোট ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয় আম্ফানে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২০০টি সেতু ও কালভার্ট। ১৩ জেলার ৮৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে যায়। এসব ভাঙা বাঁধের মোট দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার। আম্ফানে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলের ক্ষেত। ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ১৭ জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর বোরো ধানের ক্ষেত ও ৭ হাজার ৩৮৪ হেক্টর আমবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঝড়ের পর থেকে বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। আম্ফানের কারণে দেশের দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরের ২৫ জেলার দেড় কোটি গ্রাহক ঝড়ের আগেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এসব জেলার বেশির ভাগ স্থানে ঝড় শুরু হওয়ার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা আগেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশ উপকূলে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার। রাজধানীসহ দেশের অন্তত ২০ জেলায় বাড়ি ও উন্মুক্ত স্থানে; বিশেষ করে, পার্ক ও সামাজিক বনায়ন হয়েছে এমন এলাকায় অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়ে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে আমন ধানের গাছ হেলে পড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।