প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

হোস্টেলে ভালো পরিবেশ চান কর্মজীবী নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ আগস্ট ২০২২ ২০:৫৭:০৬ | আপডেট: ২ years আগে
হোস্টেলে ভালো পরিবেশ চান কর্মজীবী নারীরা

দেশে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারাদেশে কর্মজীবী নারীদের জন্য কিছু মহিলা হোস্টেল রয়েছে। কর্মজীবী নারীর তুলনায় এই আবাসন সুবিধা একেবারে অপ্রতুল। সবাই সিটের জন্য মুখিয়ে থাকলেও বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এসব হোস্টেলে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে এসব হোস্টেল নিয়েও রয়েছে নারীদের অসংখ্য অভিযোগ।

সম্প্রতি রাজধানীর নিউ বেইলি রোডে অবস্থিত মহিলা হোস্টেল নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যা সমাধানের জন্য হোস্টেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছেন কর্মজীবী নারীরা।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে- ১. সকাল ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত লিফট চালু রাখা, ২. প্রতিটি ফ্লোরে ডাবল বার্নারের দুইটি চুলা রাখা, ৩. মেডিক্যাল সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা রাখা, ৪. গেস্টরুমে রাত ১০ টা পর্যন্ত অতিথি বসতে দেয়ার সুযোগ, ৫. একজন নারীর সকল সুবিধা নিশ্চিত করা

নাম না প্রকাশের শর্তে এক নারী বলেন, বিল্ডিংটির ৯ তলা থেকে ১২ তলা পর্যন্ত আমাদের হোস্টেল। যেখানে পায়ে হেটে ওঠা অনেক কষ্টকর। আগে রাত ১০ টা পর্যন্ত লিফট চালু ছিল। কোন পূর্ব নোটিশ ছাড়ায় গত ২৯ আগস্ট রাতে তা রাত ৮ টা করা হয়। জরুরী ক্ষেত্রেও রাত ১০ টার পরেও লিফট চালু করেন না কর্তৃপক্ষ।

এক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে ঐ নারী বলেন, একবার নিচে পড়ে একজনের পা মচকে গিয়েছিল। কর্তৃপক্ষ মেডিক্যাল সাপোর্ট দেয়া তো দূরের কথা লিফটও চালু করে দেয়নি। তারা ''নারী'' বলে দায় এড়িয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা কর্মজীবী ও প্রাপ্তবয়স্ক। আমাদের হল থেকে বের হতে হলেও খাতায় স্বাক্ষর করে বের হতে হয়। সেক্ষেত্রে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ কীভাবে এর জন্য দায়ী থাকবেন তা আমার মাথায় আসে না।

তাসফিয়া রাত্রি (ছদ্মনাম) নামের আরেক নারী বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এই হোস্টেলে আছি। নারীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে কোন সমস্যা হলে এখানে সিট বাতিল হয়ে যায়।

এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে ঐ নারী বলেন, ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে আমাদের এক আপু কয়েক দিন আগে আইনি জটিলতায় পড়েন। উনি দোষী সাব্যস্ত না হওয়া সত্ত্বেও উনার সিট বাতিল হয়ে যায়। কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও উনার ছোট বোনের সিটও বাতিল হয়ে যায়। সিট বাতিলের ঝুঁকি আর মানসিক চাপ নিয়েই আমাদের এখানে থাকতে হয়।

লিফটের সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, সারাদিন পরিশ্রম করে আমরা নারীরা কীভাবে ১২ তলা পর্যন্ত হেটে উঠব। আর আমরা সবাই তো আর সরকারি চাকরি করি না বা সবার অফিসও হোস্টেলের আশেপাশে না। কেউ উত্তরায় চাকরি করে, কেউ কেউ নারায়ণগঞ্জেও চাকরি করে। আর এই যানজটের মধ্যেও অনেকেই সঠিক সময়ের মধ্যে হোস্টেলে পৌঁছাতে পারে না। এরপর হঠাৎ যদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেক্ষেত্রে হোস্টেল কর্তৃপক্ষের কোন সহায়তা পাওয়া যায় না।

সরকারি নির্দেশনা মতে যেখানে ২ ঘণ্টা ইলেক্ট্রিসিটি থাকে না সেক্ষেত্রে আলাদা দুই ঘণ্টা করে কেন লিফট বন্ধ রাখতে হয়, প্রশ্ন রাখেন কর্মজীবী এ নারী।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ''হোস্টেলে গরম পানির জন্যও কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা যেহেতু মেয়ে আমাদের মধ্যে হাইজেনিক সমস্যা থাকে। এছাড়াও পিরিওডিক্যাল মুহূর্তে আমাদের গরম পানির দরকার হয়। এমনকি করোনার সময় সরকারিভাবে নির্দেশনা থাকলেও আমাদের জন্য গরম পানির ব্যবস্থা ছিল না। যদি আমরা ইলেকট্রনিক কোন পণ্য ব্যবহার করি সেগুলোও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কারো সামর্থ্য থাকুক আর না থাকুক এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একটা ১০০ টাকার ইলেক্ট্রিক স্টিক ব্যবহার করে ১০০০ টাকা জরিমানা গুণতে হয়।''

চুলার সমস্যা নিয়ে এ নারী বলেন, অনেকবার জানালে ডাইনিং-এ আমাদের জন্য দুইটি চুলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। কিন্তু এটাও ছিল ''আইওয়াশ''। কারণ এক মেয়ে চুলায় কাঁঠালের বিচি ভেজে খাওয়ায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ৭ দিনও আমরা এ চুলা ব্যবহার করতে পারিনি।

কর্মচারীদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঐ নারী আরও বলেন, এখানে কর্মচারীদেরও ব্যবহার অনেক খারাপ। তাদের ব্যবহার দেখলে মনে হয় তারা নয়, আমরা তাদের সেবা দেয়ার জন্য এখানে থাকি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নীলক্ষেতে মহিলা কর্মজীবী হোস্টেলের গেট বন্ধ হয় রাত ১১ টায়। আর আমাদের গেট বন্ধ হয় রাত ১০ টায়। অনেকবার এটা নিয়ে বলা হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নারীরা বলেন, ''অভিযোগ দিতে গিয়েও আমাদের বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরবর্তীতে ইডি (প্রকল্প পরিচালক) ম্যাডামকে এ আবেদনপত্র জমা দিতে আড়াই ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। তিনি আমাদের সাথে দেখাও করেননি। তিনি যখন বের হয়ে যাবেন তখন আমরা গেলেও তিনি কোনও কথা বলেননি। কাগজটি নিলেও উল্টো তিনি আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়েছেন।''

এ বিষয়ে হোস্টেল সুপার ফিরোজা সুপার দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, সরকারি অফিসের সময়সূচি কমানোর কারণে লিফটের সময় কমানো হয়েছে। তবে গেইট আগের মতো ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে লিফটটা আমরা ৮ টা পর্যন্ত খোলা রাখব। এজন্য একটি নোটিশ দিয়েছি, সে প্রেক্ষিতে লিফটের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিল মেয়েরা। তবে সে কাগজ এখনো হাতে পাইনি।

তিনি আরও বলেন, মেয়েদের আবেদনপত্র হাতে পেলে আমরা একটা সভার মাধ্যমে তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সাকিউন নাহার বেগম (অতিরিক্ত সচিব) দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, এখনো এমন কোনও আবেদনপত্র হাতে পাইনি। আর মেয়েদের অভিযোগ সম্পর্কেও শুনিনি। যদি এমন কোন আবেদন তারা করে থাকে, তাহলে যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিং শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।