প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে জাফরুল্লাহর মরদেহ, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৪১:১২ | আপডেট: ২ years আগে
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে জাফরুল্লাহর মরদেহ, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন সর্বস্তরের মানুষ | সংগৃহীত ছবি

সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন সর্বস্তরের মানুষ।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইসএ মাঠে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি রাখা হয়। একে একে সবাই শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এরপর থেকেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী, গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবকসহ সর্বস্তরের মানুষ। স্থানীয় ইউনিয়ন ও উপজেলার বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।

সকলের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জুমার নামাজ পর্যন্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ এখানে রাখা হবে। জুমার নামাজের পর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পঞ্চম এবং শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুপুর ২টায় সূচনা ভবনের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে বলে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিইও ডা. মঞ্জুর কাদির।

ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মারা যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনার পর কিডনি সমস্যার পাশাপাশি তার লিভারের সমস্যাও দেখা দেয়। এ ছাড়া, তিনি অপুষ্টি‌সহ গুরুতর সেপ‌টি‌সে‌মিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন একজন ভাস্কুলার সার্জন। ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

তার বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। যিনি বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের ছাত্র ছিলেন। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিনী। মা-বাবার দশ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়।

তিনি মূলত জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ। ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি দেশকে ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে, ওই নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বহির্বিশ্বে তার পরিচয় বিকল্প ধারার স্বাস্থ্য আন্দোলনের সমর্থক ও সংগঠক হিসেবে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় অক্সফোর্ড থেকে নিজের পড়াশোনা শেষ করে ভারতে এসে স্থাপন করেন বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল। স্বাধীনতার পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে কম মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ করেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ১৯৬৫ সালে প্রথমে লন্ডনে যান এফআরসিএস করতে। ওই সময় তার জীবনযাত্রা ছিল অগ্রগতিমূলক।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম জিএস ডা. এমএ মবিনকে নিয়ে আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের মেলাঘর এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল- ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের এক দিশারি মানুষ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন তিনি।

জাতীয় দুর্যোগ ও রাজনৈতিক সংকটে তিনি সর্বদাই নির্ভীক থেকে সত্য বলে গেছেন, প্রতিবাদী হয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন।