২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক উৎস থেকে দুই লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে সরকারের ব্যাংক ঋণের এ প্রস্তাব তুলে ধরেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে।
আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী জানান, নতুন অর্থবছরে রাষ্ট্র পরিচালনার ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার।
এছাড়া বৈদেশিক ঋণ হিসাবে নেবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিতে চায় সরকার। যার পরিমাণ ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।
অর্থের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল সরকার। অর্থবছরের শুরু থেকেই এই ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা গেছে। কারণ, তারল্য সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারকে তেমন একটা ঋণ দিতে পারেনি। বেশিরভাগ ঋণ এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৪ মে পর্যন্ত সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৮৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৭১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা নিয়েছে নতুন টাকা ছাপিয়ে।
এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ১৮ হাজার কোটি টাকা আর অন্যান্য খাত থেকে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই- এপ্রিল) যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ৩ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সরকার তার কোষাগার ও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে। কিন্তু গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই- এপ্রিল) ৬৮ হাজার ৩৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয় ৭১ হাজার ৬১৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত ১০ মাসে যা বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে ৩ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বেশি পরিশোধ করেছে সরকার। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কোনো ঋণ পায়নি। উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের চাপে মূল ও মুনাফাসহ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে।