প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

ডলার সংকটে ঝুলে গেছে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ মার্চ ২০২৩ ১০:১০:৪১ | আপডেট: ২ years আগে
ডলার সংকটে ঝুলে গেছে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ

ঝুলে গেছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ। এলসি জটিলতার কারণে একরকম বন্ধ হয়ে আছে পাথর, বিটুমিন ও লাইটিংয়ের রসদ আমদানি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার না থাকায় তারা ঠিকাদারের বিলও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ব্যাংক বলছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত ডলার নেই।

দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ও আকর্ষণীয় এই রানওয়ের অর্ধেক অংশ সাগরে আর অর্ধেক অংশ থাকবে স্থলভাগে। স্থলভাগের নির্মাণ কাজ হয়ে গেলেও জোরেশোরে চলছিল সাগরের অংশের নির্মাণযজ্ঞ। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে কাজের গতি কমতে কমতে এখন থমকে গেছে।

প্রকল্পের তহবিলে পর্যাপ্ত দেশীয় মুদ্রা থাকলেও ডলার সংকটে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে পারছে না ব্যাংক। এই মুহূর্তে স্থানীয় একটি ব্যাংকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ টাকা জোগান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডলার দিতে পারছে না ব্যাংক।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ হচ্ছে সমুদ্রের জলরাশির ওপর। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দিনরাত সাগরজল ছুঁয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করবে এই রানওয়েতে। ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সমুদ্রে সম্প্রসারণ প্রকল্প’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রবক্ষে নির্মিতব্য ১ হাজার ৭০০ ফুটের রানওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। রানওয়ের অন্তত ৭০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের পানির ওপর। এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউসিবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন-জেভি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি শেষ হলে আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হবে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলেই এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ওঠা-নামা করতে পারবে ৩৮০-এর মতো সুপরিসর এয়ারবাস।

বেবিচক সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৫০০ ফুট। সাগরবক্ষে বিস্তৃত হওয়ার পর কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এটি হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার থেকে সরাসরি পূর্ণ লোডে সুপরিসর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা, রাত্রিকালীন বিমান পরিচালনা, বিমানবন্দরে যাত্রী ও কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন সম্ভব হবে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার-এর দৈনিক ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ১৮-২০টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও কক্সবাজার-যশোর রুটে চিংড়ি পোনা সরবরাহ করছে কয়েকটি কার্গোবিমান।

সমুদ্রজলের রানওয়ের সম্প্রসারণ প্রকল্প শেষ হলে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বড় বড় উড়োজাহাজ এখানে অবতরণ করতে পারবে জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান  বলেন, আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিশেষ এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

এই রানওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এই বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক এভিয়েশন হাব হিসেবে ব্যবহার হবে। আন্তর্জাতিক টার্মিনাল হবে, বিদেশি পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজার আসার সুযোগ পাবেন। ফলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে আরও গতিশীলতা আসবে।

তিনি আরও জানান, এলসি ওপেনের জন্য আমি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এলসি জটিলতা কাটিয়ে যথাসময়ে কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে না পারলে রানওয়ে সম্প্রসারণ উন্নয়ন কাজের গতি শ্লথ হয়ে যাবে। যথাসময়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলেও জানান বেবিচক চেয়ারম্যান।