প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাসের দাবি নারী সাংসদদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ জুন ২০২৩ ১৬:৫৯:৪৪ | আপডেট: ২ years আগে
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাসের দাবি নারী সাংসদদের

২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ বিনির্মাণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর খসড়া দ্রুত অনুমোদনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নারী সদস্যরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন কেন জরুরি শীর্ষক মতবিনিময় সভায় নারী সংসদ সদস্যরা এ দাবি জানান।

শনিবার নারী মৈত্রী আয়োজিত রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত আইসিটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনডিসি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- শবনম জাহান শিলা, সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩; অ্যারোমা দত্ত, সংরক্ষিত মহিলা আসন-১১; নার্গিস রহমান, সংরক্ষিত মহিলা আসন-২৫; লুৎফুন নেসা খান, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪৮; আফরোজা হক, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৫০; আদিবা আনজুম মিতা, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৭; বাসন্তী চাকমা, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৯; সালমা চৌধুরী, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৪; উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, সংরক্ষিত মহিলা আসন-১২ এবং শিরিন নাঈম পুনম, সাবেক সংসদ সদস্য।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ) মো: সাইদুর রহমান।

তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেয়া সত্তেও এখনও বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক উপলব্ধি করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় স্পিকারদের সম্মেলনে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই যুগান্তকারী ঘোষণাকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রন আইনের বিভিন্ন দুর্বল দিকসমূহ চিহ্নিত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি (ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) শক্তিশালী ও বিশ্বমানে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এবং অধিকতর সংশোধনের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) আলোকে প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছেন। উল্লেখ্য, যে বাংলাদেশ এফটিসিতেতে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ। মতবিনিময় সভায় নাছিমা বেগমকে প্রধান উপদেষ্টা করে এক কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে আহ্বায়ক করা হয় সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩ আসনের সাংসদ শবনম জাহান শিলা।

নারী সাংসদদের নিয়ে নবগঠিত এই ফোরামের সদস্যরা জানান, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর খসড়া দ্রুত অনুমোদনের ব্যাপারে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবেন। মন্ত্রীসভায় খসড়া অনুমোদনের পর যখন সেটি সংসদে উপস্থাপন করা হবে, তখন আইন পাসের ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য প্রদান করবেন এবং আইন পাসের দাবিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলেও এই সাংসদরা মনে করেন। এসময় তারা ২০৪০ সালের মধে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে একযোগে শপথ নেন।

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, নারীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে নারী মৈত্রী ৪০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সালে মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে নারী মৈত্রী উদ্যোগটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করেছে। নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নারীর কণ্ঠস্বরকে বলিষ্ঠ করা, নারীদের একাত্বতা ও সংহতির মাধ্যমে তামাক আইন সংশোধন ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির দাবি উত্থাপন করার লক্ষ্যে নারী মৈত্রী এই কার্যক্রমের অংশীদার হয়েছে। সে লক্ষ্যে নারী মৈত্রী সংসদীয় নারী সদস্যদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় পর্যায়ের ফোরাম গঠন করেছে, যারা তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও কর বৃদ্ধির দাবিতে নিরলস সমর্থন ও পরামর্শ দেবেন।

নারী সাংসদ অ্যারোমা দত্ত বলেন, বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এতে তারা মুখের ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া তামাকের কারণে গর্ভবতীদের গর্ভপাত হচ্ছে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যুও হচ্ছে। এজন্য নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর খসড়া দ্রুত পাশ করার দাবি জানাই।

সংসদ সদস্য আফরোজা হক বলেন, সংসদে যাতে এই আইন পাশ হয়, সে বাপারে এই ফোরাম বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি সবাইকে জনমত তৈরি করে দাবি তুলতে হবে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া পাশ করার জন্য। মোটকথা সব বাধা উপেক্ষা করে এই মরণছোবল থেকে সবাইকে রক্ষা করতে হবে।

নারী সাংসদ শবনম জাহান শিলা বলেন, তামাক নারী স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তামাক ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। তামাকের কারণে যেসব রোগ হচ্ছে, সেই রোগের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে অনেক পরিবার দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। তাই এখনই উপযুক্ত সময়, তামাক বর্জন করার। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর খসড়া যাতে অবিলম্বে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়, সে দাবি জানাচ্ছি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: সাইদুর রহমান জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীটি মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের জন্য কেবিনেট ডিভিশনে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে সেটি কেবিনেট ডিভিশনে পাশ হয়ে চলতি সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করা হবে।