বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাক্ষ্য নেয়ার সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় আইনজীবীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজের এজলাস কক্ষে এ ঘটনার শুরু হয়, যা চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ অবস্থায় বিচারক সাক্ষ্য মুলতবি রেখে এজলাস ছাড়তে বাধ্য হন।
জানা যায়, মামলাটি গত ২৮ মে থেকে প্রতিদিন সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য রাখা হচ্ছিল। তাই গতকাল সোমবার বিএনপিদলীয় আইনীজীবী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী মামলাটির সাক্ষ্য চলাকালে বিচারক ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানকে বলেন, ‘মামলাটিতে প্রতিদিন সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়টি দৃষ্টিকটূ। আমরা চাই এভাবে যেন প্রতিদিন সাক্ষ্যগ্রহণ না করা হয়।’ তখন বিচারক বলেছিলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন।
এরপরও মঙ্গলবার আবার মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য্য থাকায় এ আইনজীবী বিএনপিদলীয় কয়েকজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে বিষয়টি আবার আদালতে মেনশন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের একজন প্রসিকিউটর বিচারককে মেনশন করা আইনজীবী ফারুকীর বক্তব্য ভিডিও করছিলেন। তখন বিএনপিদলীয় আইনজীবীরা ভিডিও করতে বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়, যা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। তখন বিচারক এজলাস ছেড়ে যান।
খবর পেয়ে আওয়ামী লীগদলীয় আইনজীবীরাও ওই আদালতে আসেন। তখন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিএনপিদলীয় আইনজীবীরা আদালত কক্ষে অবস্থানের পর তারা চলে যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিচারক পুনরায় এজলাসে ওঠেন। তিনি ২৫ মিনিট অবস্থান করে সাক্ষীর অবশিষ্ট জবানবন্দি শেষ করেন।
এ নিয়ে দুই পক্ষ একে অপরকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলার আসামি তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান পলাতক। তাই এ মামলায় আসামিপক্ষের কোনো বক্তব্য থাকতে পারে না। তারপরও তারা প্রতিদিন আদালতে উপস্থিত থেকে বাধা সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার তারা আদালতের সঙ্গে অনেক অশোভন আচরণ করেছেন।’
এ সম্পর্কে আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘আসামি পলাতক থাকলেও আমারা কি আদালতে উপস্থিতও থাকতে পারব না? তারা আদালতকক্ষে বেআইনিভাবে ছবি তুলতে, ভিডিও করতে পারেন? আমরা এর প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর চড়াও হয়ে মারধর করেছেন। তারাই আদালতের পরিবেশ নষ্ট করেছেন।’
এদিকে আজ মামলাটিতে আরেকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। এ সাক্ষী হলেন আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের চাটার্ড অ্যাকাউন্টেড এম এ মতিন। এ নিয়ে মামলাটির ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো। মামলাটিতে আগামীকাল বুধবার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
মামলায় গত ২১ মে একই আদালত মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ জহুরুল হুদার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন।
চলতি বছরের ২৬ জুন হাইকোর্ট তারেক ও জোবায়দাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার দুর্নীতি মামলা দায়ের ও তার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে করা পৃথক রিট আবেদন খারিজ করে দেন।
রিট খারিজ করে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট একইসঙ্গে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা এ মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে যত দ্রুত সম্ভব বিচার কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে এ রায় পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে মামলার রেকর্ড ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠাতে বলা হয়।
ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।
২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
চিকিৎসক জোবাইদা বর্তমানে স্বামী তারেকের সঙ্গে ১৩ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। জোবাইদার বিরুদ্ধে দুদক মামলাটি করেছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০০৮ সালে এর কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এখন সেই বাধা কাটল।
নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবাইদা ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন। তার দুই বছর আগে তারেকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় ২০১৪ সালে জোবাইদাকে বরখাস্ত করে সরকার।