প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম

রোকন উদ্দীন
১৬ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৩৯:৪৩ | আপডেট: ২ years আগে
দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম

বৈশ্বিক খাদ্য সংকট ও আগামী বছর দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসের পর বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

সরকারি হিসাব বলছে, গত এক সপ্তাহে চাল, আটা-ময়দাসহ বিভিন্ন খাদ্যের দাম কেজিপ্রতি ২-৫ টাকা বেড়েছে।

ব্যবসায়ী ও সাধাণ মানুষ বলছেন, খাদ্য সংকটের বিষয়টি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে বাজারে যদি আতঙ্কের কেনাকাটা বেড়ে যায়, তবে বাজারে খাদ্যের দাম শুধু বাড়বেই না খাদ্যের ঘাটতিও হতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষের পূর্বপ্রস্তুতির জন্য এই পূর্বাভাসগুলো দেয়া যেমন জরুরি তেমনি সুযোগ সন্ধানীরা যেন এই পরিস্থিতিতে ফায়দা লুটতে না পারে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। একইসঙ্গে সংকট সামাল দিতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা আরো বাড়াতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে বেসরকারি খাতকেও।

বিশ্ব আগামী বছর ‘দুর্ভিক্ষের মত খারাপ পরিস্থিতির’ মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে গত বৃহস্পতিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, অথবা জলাধার আছে, সেখানে যেন কিছু না কিছু উৎপাদন করে। কারণ এটা বিশ্বব্যাপী একটা আশঙ্কা আগামী বছরটা মহা-সংকটের বছর হবে। সবচেয়ে বড় কথা খাদ্য সংকটের বিষয়টা বেশি বিবেচনা করা দরকার। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাধি না থাকে। আমরা সেদিক লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি।”

এদিকে এক প্রতিবেদনে চলতি বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২ শতাংশ ছাড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই মূল্যস্ফীতি মানুষের প্রকৃত আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো বিপাকে পড়বে। কারণ এই অঞ্চলের মানুষ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ খাদ্যের জন্য ব্যয় করে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার মূল্য তালিকা অনুযায়ী, গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ, যার মধ্যে গত এক মাসে বেড়েছে ৭ শতাংশ। একইভাবে গত এক বছরে আটার দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশ, যার মধ্যে গত এক মাসে বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

এছাড়া গত এক মাসে ডালের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বেড়েছে ৬-১৪ শতাংশ, ডিম ও মাংসের দাম বেড়েছে ৯-১০ শতাংশ।

মিহি চালের দাম এক মাস আগেও ছিল কেজিপ্রতি ৬০-৭০ টাকা, তা এখন বেড়ে ৬৫-৭৫ টাকা হয়েছে। শনিবার মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৮ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। প্রতি কেজি খোলা আটার দাম এখন ৫৮ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ৫২ টাকা, এছাড়াও প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়ে হয়েছে ৫৮-৬০ টাকা।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বিজনেস পোস্টকে বলেন, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ও জ্বালানি সংকটে খাদ্যের আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে যে সংকট তৈরি হবে তার তথ্য উপাত্তগুলো আগাম সতর্কবাণী হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই এই পূর্বাভাসগুলো মানুষের জানা থাকা দরকার। তবে সেই আগাম সতর্কবাণীর ভিত্তিতে সরকারের কর্মপরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। আবার একইসঙ্গে এটাও ঠিক যে- এ ধরণের ক্রাইসিস সময়গুলোকে নিজের আখের গুছানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার প্রবণতা থাকে অনেকের মধ্যে।

এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ খাতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের এ্যাক্টিভ রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, খাদ্যের দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার সোশ্যাল সেপ্টিনেটের আওতা বাড়াতে পারে। যা দরিদ্রদের সঙ্গে দারিদ্রের খুব কাছাকাছিতে থাকা মানুষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও কর্মীদের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইনসেনটিভের ব্যবস্থা করতে হবে।