আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা শাহাদৎ বার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিনে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় বিপথগামী সৈনিকরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
চৌদ্দ বছরে পা দেওয়া এ দিনটি পালন করতে বিজিবি ও সেনাবাহিনী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিজিবি ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর ও বর্তমান বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত হয় এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এদিন কিছু বিপদগামী বিদ্রোহী বিডিআর সদস্য ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ছাড়াও নারী ও শিশুসহ আরও ১৭ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এদিকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলা চূড়ান্ত আপিল শুনানির অপেক্ষায় থাকলেও একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার এখনো বিচারিক আদালতেই ঝুলছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে বিদ্রোহের মধ্যে পিলখানায় অর্ধ শতাধিকের বেশি সেনাকর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের মামলাটি ২০১৭ সালে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট ১৩৯ আসামির মৃত্যুদ- বহাল রাখেন এবং ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তিন থেকে ১০ বছরের সাজা হয় ২২৮ জনের।
আসামিদের পক্ষে অর্ধশতাধিকের বেশি আপিল ও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন এবং যাদের যাবজ্জীবন হয়েছে, তাদের দ- বাড়িয়ে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুণ্ড চেয়ে ৩৩টি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
সর্বোচ্চ আদালতের আপিল শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আপিল বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত এলেই চূড়ান্ত শুনানি শুরু হবে। চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই শুনানি যেন হতে পারে, সেজন্য আমরা আদালতকে আর্জি জানাব।’
এ মামলায় আলাদা বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হবে কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নিয়মিত যে আপিল বিভাগের বেঞ্চ আছে সেখানেই এর শুনানি হবে।’
তিনি জানান, আলোচিত এ মামলায় সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি চলতি বছরেই শুরু হতে পারে। আপিলের সারসংক্ষেপ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষকে। সেটি চার সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহ সময়ের মধ্যে হতে পারে, এর বেশি কোনোভাবেই হবে না। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছে।
২০০৯ সালের ওই বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭টি মামলার বিচারকাজ বাহিনীর নিজস্ব আদালতে শেষ হয়। সেখানে ছয় হাজার জওয়ানের কারাদণ্ড হয়। বিদ্রোহের বিচারের পর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার শুরু হয় সাধারণ আদালতে।
ঢাকার জজ আদালতে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর দেওয়া রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদ- এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২৫৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- ও অর্থদ- দেওয়া হয়।
এর পর হাইকোর্টের রায় হয় ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর। পরে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলেও ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি তোলার খরচ, অনুলিপি পাওয়ার প্রক্রিয়া, আপিলের পেপারবুক তৈরি, আদালতে সেই পেপারবুক রাখার স্থান, চূড়ান্ত বিচারের সময়সহ বিচারিক প্রক্রিয়ার নানা কারণে আপিল শুনানি শুরু হতে দেরি হচ্ছে মনে করেন আইনজীবীরা।
পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনা তখন পুরো বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। এর পর এক মামলায় এত আসামির সর্বোচ্চ সাজার আদেশও ছিল নজিরবিহীন। ওই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের হত্যা মামলার রায় হলেও ১৪ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলার বিচার।
এদিকে পিলখানায় বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকীতে নিহতদের স্মরণে আজ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বিজিবি। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনায় পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরসহ সব আঞ্চলিক সদর দপ্তর, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন ছাড়াও বিজিবির সব মসজিদ এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিজিবির সব স্থাপনায় বিজিবি রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবেন।
অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) এবং শহীদদের নিকটাত্মীয়রা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।