শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। জেলা-উপজেলায় মন্দিরে মন্দিরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পূজামণ্ডপগুলোতে কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া, আর রং তুলিতে প্রতিমা সাজানো হচ্ছে। মাটির প্রতিমায় জীবন্ত রূপ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
অনেকের মনেই দেশের দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানার কৌতূহল জন্মে। বাংলাদেশে দুর্গাপূজা কী ভাবে শুরু হল তা নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
একনজরে জেনে নেয়া যাক দেশের দুর্গাপূজার ইতিহাস-
মহামারি করোনার কারণে গেল দুই বছর দুর্গাপূজায় উৎসবের কিছুটা কমতি ছিল। এবছর করোনার প্রভাব কমে আসায় আড়ম্বরসহকারে পূজার আয়োজন চলছে।
রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দুর্গাপূজা অন্যতম। এটি জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৮০০ বছর আগে ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজা শুরু হয়।
এই স্থায়ী মন্দিরে প্রথম দিকে অষ্টভুজার প্রতিমা এবং পরবর্তী সময়ে দশভুজা দুর্গা প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, এই মন্দিরে পূজিতা দুর্গার আরেক রূপ দেবী ঢাকেশ্বরীর নাম অনুসারেই ঢাকার নামকরণ হয়।
১৮৩০ সালে পুরনো ঢাকার সূত্রাপুরে ব্যবসায়ী নন্দলাল বাবুর মৈসুন্ডির বাড়িতে আয়োজিত হয় ঢাকার সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা। সিপাহি বিদ্রোহের সময়, ১৮৫৭-তে, বিক্রমপুর পরগণার ভাগ্যকূল জমিদার বাড়ির রাজা ব্রাদার্স এস্টেট এবং সাটুরিয়া থানার বালিহাটির জমিদার বাড়ির দুর্গাপূজা আয়োজন করা হয়। সিদ্ধেশ্বরী জমিদার বাড়ি এবং বিক্রমপুর হাউজেও বেশ জাঁকজমক করেই পূজার আয়োজন করা হয় সেই সময়।
১৯২২-২৩ সালের দিকে ঢাকার আরমানিটোলায় জমিদার শ্রীনাথ রায়ের বাড়ির পূজাও বেশ নামকরা ছিল। এছাড়াও রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কালিবাড়ি, রমনা কালিবাড়ি, রামকৃষ্ণ মিশন ইত্যাদি। রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, কলাবাগান, উত্তরা এবং বনানীর পূজা। ধীরে ধীরে এই পূজাগুলিতে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটে। এই মণ্ডপগুলিতে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সব ধর্মের মানুষ উৎসাহ ভরে অংশ নিতেন।
সিলেটের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ের দুর্গাপূজা প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। এখানে পূজিতা দেবী রক্ত বর্ণের। গোটা উপমহাদেশে এক মাত্র এখানেই রক্তবর্ণ দুর্গা। অর্থাৎ মায়ের রং লাল। দেশের তো বটেই, দেশের বাইরে থেকেও দর্শনার্থীরা লাল রঙের এই মা দুর্গাকে দেখতে আসেন।
বিংশ শতকের শুরুর দিকে শুধুমাত্র সমাজের বিত্তশালী ও অভিজাত হিন্দু পরিবারগুলি দুর্গাপূজার আয়োজন করত। গত শতাব্দীর শেষের দিকে এখানে দুর্গাপূজা সর্বজনীনতার রূপ পায়।
কথিত আছে, ১৫৮৩ সালে রাজশাহীতে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু হয়। তাহেরপুরের রাজা কংস নারায়ণ প্রথম দুর্গাপূজার প্রবর্তন করেন। তিনি বাংলার বারো ভূঁইঞার এক ভূঁইঞা। সেই সময়কার রাজাদের মধ্যে নিজের সামাজিক প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এই পূজার আয়োজন করেন।
সে বছরই জাকজমকভাবে বাসন্তী পূজার আয়োজন করেন রাজশাহীর ভাদুরিয়ার রাজা জয় জগৎ নারায়ণ। কংস নারায়ণের থেকে এগিয়ে থাকার জন্য সেসময় প্রায় ৯ লাখ টাকা খরচ করেন এই পূজায়।
এছাড়াও বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, আঠারো শতকে দেশের দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার মঠবাড়িয়ার নবরত্ন মন্দিরে দুর্গাপূজা হতো। সূত্র- আনন্দবাজার