প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

জাতিসংঘ পানি সম্মেলন শুরু ২২ মার্চ

প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে দিল্লির কাছে জানতে চাইবে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ মার্চ ২০২৩ ২১:২৫:৩২ | আপডেট: ২ years আগে
প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে দিল্লির কাছে জানতে চাইবে ঢাকা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন

তিস্তার প্রবাহ হ্রাস করার লক্ষ্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিষয়ে ভারতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টনের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ দিন ধরে অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং জেআরসি (যৌথ নদী কমিশন)-এর সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে একটি পেপার তৈরি করব। (তারপর) আমরা বিষয়টি সম্পর্কে ভারতীয় পক্ষের কাছে জানতে চাইব।’

তিনি বলেন, ঢাকা ‘সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি’ বিশ্লেষণ করছে এবং বর্তমানে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য পররাষ্ট্র দফতর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও জেআরসির সাথে যোগাযোগ করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় মিডিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় সেচের উদ্দেশ্যে তিস্তার পানি অপসারণের জন্য দুটি নতুন খাল খননের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে খবরে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মন্তব্য এসেছে।

ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তার পানি ব্যবহার করে দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে যা ভাটির দিকে বাংলাদেশে পানি প্রবাহকে প্রভাবিত করবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পরিকল্পিত তিনটি দার্জিলিং প্রকল্পের মধ্যে দুটিতে সেচের জন্য লভ্য তিস্তার পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে ডিসেম্বর-এপ্রিলের শুষ্ক মৌসুমে যখন বাংলাদেশে সেচের পানির চাহিদা বেড়ে যায়।’

প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে বেঙ্গল (পশ্চিমবঙ্গ সরকারের) সেচ বিভাগের দুটি খাল খননের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসার পর ঢাকায় উদ্বেগ আরো গভীর হয়েছে।’

মুখপাত্র বলেছেন, নয়াদিল্লির কাছ থেকে জবাব পাওয়ার পর ঢাকা সমস্যা সমাধানে তার পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।

মুখপাত্র বলেন, ‘তবে আমরা চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনার মাধ্যমে নয়াদিল্লির সাথে উদ্ভূত যে কোনো বিরোধ মীমাংসায় আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। নয়াদিল্লির কাছ থেকে জবাব পাওয়ার পর সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকা তার কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে।’

তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ঢাকা দীর্ঘদিন থেকে নয়াদিল্লির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে।

ভারতীয় সংবাদপত্রে আরো উল্লেখ করা হয় যে, গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা বারবার দিল্লিকে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন বিলম্বিত হওয়ার কারণে উদ্বেগ জানিয়েছে।

এদিকে, আগামী ২২-২৪ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নেদারল্যান্ডস ও তাজিকিস্তানের যৌথ সভাপতিত্বে ‘ইউএন-২০২৩ ওয়াটার কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৯৭৭ সালের পর ৫০ বছরে পানি বিষয়ে এটিই প্রথম জাতিসংঘ সম্মেলন।

তিনি বলেন, সম্মেলনে ‘ওয়াটার অ্যাকশন ডিকেড (২০১৮-২০২৮)’-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতির সমন্বিত পর্যালোচনা করা হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত পানি-সংক্রান্ত বিভিন্ন লক্ষ্য ও কার্যক্রমগুলোকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করে তোলা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সেহেলী সাবররীন বলেন, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল পানি বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৬ এর আওতাধীন বিষয়গুলোতে দেশের অগ্রগতি এবং এ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা করবেন।

এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

এক্ষেত্রে জলবায়ু পরবির্তনের ফলে পানি বিষয়ক অভিযোজনে বাংলাদেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতাসমূহ যেমন-ভাসমান ফসল চাষ পদ্ধতি এবং জলমগ্নতা, খরা, লবণাক্ততা ও জলবায়ু সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন স্থানীয় পদ্ধতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা হবে।

এছাড়াও, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পানির যথাযথ মূল্যায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কারিগরি পর্যায়ে যে কাজ করেছে সে বিষয়েও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হবে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ সহযোগিতার ক্ষেত্রে অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার যেসব বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বারোপ করেছে সেসব বিষয়ে প্রতিবেশী দেশসমূহ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

এক্ষেত্রে সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনাকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, শান্তি ও নিরাপত্তার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে তুলে ধরা হবে। ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’- এর আওতায় অ্যাডাপ্টিভ ডেল্টা ম্যানেজমেন্ট-এর ক্ষেত্রে যেসব স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে সে বিষয়েও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করা হবে।

সর্বোপরি, ২০১৬-১৭ সালে জাতিসংঘের মহাসচিবের হাই লেভেল প্যঅনেল অন ওয়াটার-এর সরকার প্রধানদের অন্যতম হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা, তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকলের কাছে তুলে ধরা হবে।