প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

বিজয়ের দিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:১৭:০৮ | আপডেট: ১০ মাস আগে
বিজয়ের দিন আজ

‘হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে/পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান...।’ ‘বিজয়ের কবিতা’ শিরোনামে মহাদেব সাহা এভাবেই তুলে ধরেছেন বাঙালির হাজার বছরের স্বাধিকার আন্দোলনের বীরত্বময় মুহূর্ত। আজ মহান বিজয় দিবস। দেশে ও দেশের বাইরে বাঙালির হৃদয়ে হৃদয়ে বাজবে মুক্তির শত গান। জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিনটি উদযাপন হচ্ছে নানা আয়োজনে।

এদিন প্রত্যুষে রাজধানীতে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তববক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন তারা।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ভোরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে, সকালে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর ও টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। ১৭ ডিসেম্বর বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করবেন ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরাধীনতার শেকল ভেঙে প্রথম মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করে বাঙালি জাতি। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শোষণ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে ওঠে নতুন সূর্য। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। ঘোষিত হয় নতুন বার্তা ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল।’ বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তাকে।

বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ের সংগ্রামের প্রথম প্রকাশ ’৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনের

দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। পলাশীর আম্রকাননে হারিয়ে যাওয়া সিরাজদ্দৌলা আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপে এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন।

বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তর শেষ করে একাত্তরে বাঙালি জাতি হিসাব করতে বসে। অবশেষে গভীর কালো নিকষ আঁধার থেকে জেগে ওঠে হিরণ্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে যুগের কবি, মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরও দেব, এদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’

চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বাঙালি বুঝে যায়, শেষ কামড় দেওয়ার সময় আসন্ন। পাকিস্তানিরাও আর বসে নেই। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধনযজ্ঞ। এ যেন এক প্রেতপুরী। আকাশে শকুনের উদ্ধত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান। কিন্তু ঠিকই হাড় ও খুলির স্তূপ একদিন পাললিক হয়।

মুক্তিপাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয় এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরও শানিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্যযুদ্ধে। ডিসেম্বরের শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের।

নয় মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিনিময়ে বাঙালির জীবনে ধরা দেয় স্বাধীনতা।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় শোভাযাত্রা : আজ শনিবার বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রাটি বের হবে। বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ মঞ্চে ‘আমার দেশ, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ’ সেøাগানে জোটের বিজয় উৎসবের আয়োজন আজ শেষ হবে।

বাংলা একাডেমি : শনিবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলা একাডেমি। কাল রবিবার বেলা ৩টায় একাডেমির নজরুল মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

শিল্পকলা একাডেমি : ২ দিনব্যাপী বিজয়ের উৎসব আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। গতকাল শুক্রবার প্রথম দিনে সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে শিশু-কিশোর ও যুবদের নিয়ে বিজয়ের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শনিবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি একাডেমিতে রয়েছে দিনব্যাপী স্বরচিত কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, দেশের গান ও অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

ছায়ানট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ছায়ানট আয়োজন করছে ‘সকলে মিলে দেশ-গান গাইবার, দেশ-কথা বলবার’। বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাঠে বেলা পৌনে ৪টায় আয়োজনের সূচনা হবে। পুরো অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে দীপ্ত টেলিভিশন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ৯ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ৮ দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছে। এ ছাড়াও জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করবে।