প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ জুন ২০২৩ ১৭:৫৮:০১ | আপডেট: ২ years আগে
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট থেকে ২৭ হাজার ৮৯ কেটি টাকা বেশি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ডিজিটাল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো বলে আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম।

বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে ইতোমধ্যে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালের ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

ধারাবাহিকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভবিষ্যতে বর্ধিত বিদ্যুৎ চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এছাড়া, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, ডুয়েল-ফুয়েল, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে বলা হয়, আমাদের সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া, ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ আমরা পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হতে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অফগ্রিড এলাকায় ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপন করে জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। সারা দেশে মোট ৮টি সোলার পার্ক স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্দেশ্যে ডিজেলচালিত পাম্পের স্থলে সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। সেচ কাজে ইতোমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি এরূপ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যার সম্মিলিত ক্যাপাসিটি ৪৯.১৬ মেগাওয়াট। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মোট ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রূপপুরে দেশের প্রথম ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছি। ফলে, সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ বর্তমানে ১৬ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া, বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটার এ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে, বিদ্যুতের সিস্টেম লস ১৪ শতাংশ হতে হ্রাস পেয়ে ৭.৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

বলা হয়, আমাদের লক্ষ্য হলো- ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটার এ উন্নীত করা। এছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ ও অপচয় রোধের উদ্দেশ্যে বিগত ৫ বছরে ৫৩ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে।

জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে বলা হয়, ২০০৯ সালের তুলনায় জ্বালানি তেলের মজুত ক্ষমতা ৮.৯৪ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩.৬০ লাখ মেট্রিক টন করা হয়েছে। এছাড়া, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জ্বালানি তেলের মজুত ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে ৬০ দিনে উন্নীত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ভারতের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এর মাধ্যমে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল স্বল্পসময়ে বাংলাদেশে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

তেল শোধনাগারের বিষয়ে বলা হয়, একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার, স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। জ্বালানি তেল সেক্টরের অপারেশন, বিক্রি ও হিসাব ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে ‘সমন্বিত স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা’ চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

এদিকে জ্বালানি খাতের বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, অতি সম্প্রতি ভোলা জেলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত আবিষ্কার হয়েছে। গ্যাসের উৎপাদন বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে তা দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। তেল ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। দেশের একমাত্র তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর ফলে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ১৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিসেম্বর ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। আশা করছি, এ সব কূপ খনন শেষে দৈনিক অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। সমুদ্র অঞ্চলেও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চলমান আছে। এ কাজে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় বিধায় বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। জ্বালানির বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি ও স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়া, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থবছর শেষ হয়ে এলেও রাজস্ব আদায়ে এখনও প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রয়ে গেছে। রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া এনবিআর-বহির্ভূত অন্যান্য উৎস থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে দুপুর ২টায় বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনের অনুমোদন দেয়।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল তার পঞ্চম বাজেট উত্থাপন করছেন। এবারের বাজেটের মূল দর্শন হচ্ছে, ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা।